- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক | কুমিল্লা:
বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা বিএনপির দীর্ঘদিনের নেতা আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনকে বাদ দিয়ে মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নগরজুড়ে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধর্মসাগরপাড়ের বিএনপি কার্যালয় থেকে শত শত নেতা-কর্মী মশাল হাতে বেরিয়ে আসে। “আমাদের নেতা ইয়াছিন ভাই চাই”, “অবৈধ প্রার্থী মানি না”, “ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন চলবে না”—এমন স্লোগানে তারা নগরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
এর আগে সোমবার রাতেও আমিন-উর-রশিদের সমর্থকেরা কান্দিরপাড় এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আলেখারচর এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে যান চলাচলে সাময়িক বিঘ্ন ঘটে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাজ্জাদ হোসেন নামের এক যুবদল নেতা বলেন, “আমিন ভাই কুমিল্লা বিএনপির সংকটে পাশে ছিলেন, মামলা-মোকদ্দমায় সহায়তা দিয়েছেন। আজ তাঁকে বাদ দেওয়া আমাদের জন্য অন্যায়। আমরা দলের উচ্চপর্যায়ের কাছে দাবি জানাচ্ছি—এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।”
আরেক বিক্ষোভকারী নারী কর্মী জানান, “আমরা রাজপথে নির্যাতন সহ্য করেছি তাঁর (ইয়াছিনের) নেতৃত্বে। এখন বাইরে থেকে এনে প্রার্থী দিলে সেটা আমরা মানব না।”
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম জানান, মশাল মিছিলের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি বলেন, “কিছুক্ষণের মধ্যেই মিছিলকারীরা চলে গেছেন। বর্তমানে কোনো ধরনের অস্থিরতা নেই।”
কুমিল্লা-৬ আসনটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ উপজেলা ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত। নতুন সীমানা নির্ধারণের পর এই আসনে মনিরুল হক চৌধুরীকে প্রার্থী করা হয়, যিনি এর আগে কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং দলীয় কার্যালয় ও কর্মী সংগঠন পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে অনুসারীরা দাবি করছেন।
বিএনপির স্থানীয় সূত্র জানায়, মনোনয়ন ঘোষণার পর যেখানে একপক্ষ বিক্ষোভ করছে, অন্যদিকে মনিরুল হক চৌধুরীর সমর্থকেরা এলাকায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। তাঁদের দাবি, “দল এখন অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে, যা নির্বাচনী মাঠে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং জেলা নেতাদের মাধ্যমে উভয় পক্ষকে সংযমী থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, “এই বিরোধ সাময়িক। সবাই শেষ পর্যন্ত ধানের শীষের পক্ষে একজোট হবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”