- ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যাকাণ্ড নিয়ে একাধিক দিক বিবেচনায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, হত্যাকারীদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং এ ঘটনায় ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। হত্যার ২৪ ঘণ্টা পর গত শনিবার নিহত মাহবুবের বাবা আবদুল করিম মোল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে পাওয়া কিছু তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা গেছে, তবে এখনও হত্যার মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ্ বলেন, তদন্ত চলছে, এ মুহূর্তে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, তিনজন দুর্বৃত্ত একটি মোটরসাইকেলে করে এসে মাহবুবুরকে গুলি করে ও দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। হামলাকারীদের একজন হেলমেট পরা ছিল এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার দুপুরে, যখন মাহবুবুর রহমান তাঁর নিজ বাড়ি খুলনার দৌলতপুর পশ্চিম মহেশ্বরপাশা এলাকায় প্রাইভেট কার ধুচ্ছিলেন। এ সময় হামলাকারীরা এসে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, হত্যার পেছনে রয়েছে আধিপত্য বিস্তার, দলীয় কোন্দল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও চরমপন্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ইত্যাদি নানা বিষয়। একজন ছায়া তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এসব দিক মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে।
সূত্রে আরও জানা যায়, সরকার পতনের পর মাহবুব স্থানীয়ভাবে কিছু দখল, জমি কেনাবেচা ও সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ ও এক চরমপন্থী নেতার আত্মীয় ছিলেন, যার ফলে এলাকায় তাঁর প্রভাব ছিল ব্যাপক। এ নিয়ে কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি হয়। মাদক বাণিজ্যে হস্তক্ষেপ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় মাহবুব একাধিক গোষ্ঠীর টার্গেটে পরিণত হন। পুলিশ তাঁর গতিবিধির ওপর নজরদারি করছিল। মাহবুব যে গাড়ি ব্যবহার করতেন, সেটি সম্প্রতি এক যুবলীগ নেতার কাছ থেকে কিনেছিলেন বলেও জানা গেছে।
নিহতের বাবা বলেন, তাঁর ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করত, চাঁদা চাইলে রুখে দাঁড়াত। স্থানীয় কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে তিনি মনে করেন।
মাহবুবের স্ত্রী এরিন সুলতানা বলেন, কুয়েটের একটি ঘটনায় দলের নির্দেশে তিনি অংশ নিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে একটি যুবদলীয় সুধী সমাবেশে মারামারির ঘটনায় বন্ধু জাকির মামলা করার পর থেকে মাহবুব নিয়মিত হুমকি পেতেন। তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
নিহতের শ্বশুর ও মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক প্রচার সম্পাদক আজাদ বেগ বলেন, মাহবুব কুয়েটের ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের সময় যুবদল নেতা হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ৫ আগস্টের ঘটনায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এছাড়া মানিকতলার এক সংঘর্ষের পর তাঁর বন্ধু জাকির মামলা করলে মাহবুবকে হুমকি দেওয়া শুরু হয়।
সূত্র বলছে, মাহবুব আরমান নামের এক আত্মীয়ের মামলার সহায়তা করতেন, যা নিয়ে হুমা গ্রুপের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি হয়। মাহবুবের ঘনিষ্ঠ এক রাজনৈতিক সহকর্মীর দাবি, হুমা গ্রুপ মনে করত মাহবুব তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে, যদিও তিনি বারবার ভুল বোঝাবুঝি বলে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এরপর কারাগার থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানান, হত্যাকাণ্ডের কারণগুলোর ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত সজল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কে হত্যাকারীদের তথ্য দিয়েছিলেন। পুলিশ হত্যাকারীদের শনাক্ত করেছে এবং শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করে হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।