- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | PNN খুলনা:
খুলনা মহানগরীর আলোচিত নাগরিক নেতা ও স্বাচিপের প্রভাবশালী নেতা, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনা জেলা সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন তারই দুই মেয়ে। পারিবারিক সম্মান রক্ষায় এবং দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে বুধবার (৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন এপিসি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ তামান্না আলম। এ সময় তার ছোট বোন ডা. তাসনুভা আলম ও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ তামান্না আলম অভিযোগ করেন, ১৯৮৯ সালের ১৩ নভেম্বর তাদের মা ডা. শামসুন্নাহার মিলনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় তার বয়স ছিল ১৪ বছর এবং ছোট বোনের বয়স ছিল মাত্র সাত। বহু বছর বিষয়টি আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হলেও, সাম্প্রতিক ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে এটি হত্যাকাণ্ড ছিল। এ ঘটনায় গত ৯ সেপ্টেম্বর খুলনার আদালতে মামলা (সিআর ১১৪৪/২৫) দায়ের করেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তামান্না আলম অভিযোগ করেন, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে হেনা রানী ভৌমিক নামে এক বিবাহিতা ভিন্ন ধর্মের নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত। এ সম্পর্ক থেকে প্রায় ১৮ বছর আগে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। এই ঘটনা শুধু পারিবারিকভাবে নয়, সামাজিক ও নৈতিকভাবেও তাদের জন্য এক বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, “আমার বাবার অনৈতিক সম্পর্ক আজ আমাদের পুরো পরিবারকে বিপর্যস্ত করেছে। একজন ভিন্ন ধর্মের বিবাহিতা নারীকে ঘিরে আমাদের পরিবার ভেঙে গেছে। অথচ তিনি ছিলেন মাত্র ১৩০০ টাকা বেতনের একজন কর্মচারী। আজ তিনি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হয়ে গেছেন। আর আমাদের ৫০ বছরের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এপিসি ফার্মাসিউটিক্যালস লি: ধ্বংসের পথে।”
তাদের অভিযোগ, ডা. বাহারুল আলমের সহায়তায় হেনা রানী ভৌমিক ও তার স্বামী চিত্ত রঞ্জন সেন নানাভাবে দুই বোনকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে কর্মচারীদের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে। এ ঘটনায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ১৪০২, ১৫৬৭/২০২৪ ও ৫৩৭/২০২৫) করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে একাধিক আর্থিক অনিয়মের কথাও তুলে ধরেন তারা। শেখ তামান্না জানান, তার বাবা তাদের(শেখ তামান্না আলম ও ডা. তাসনুভা আলম) স্বাক্ষর জাল করে ঢাকাস্থ একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়েছে ৭০ লাখ টাকায়। তাছাড়া জালিয়াতি করে তাদের নামে ৩০ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণও তোলা হয়েছে। এসব ঘটনায় তারা পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং 1330/25 ও 1335/25)।
অভিযোগে আরও বলা হয়, স্মার্ট এগ্রো বিডির স্বত্বাধিকারী লুবনা জাহানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নেওয়ার পর চুক্তি ভঙ্গ করে তা আত্মসাৎ করেন ডা. বাহারুল আলম। এ ঘটনায়ও মামলা চলছে। এছাড়া এপিসি ফার্মাসিউটিক্যালস লি:-এর ১০ হাজার শেয়ার অবৈধভাবে হেনা রানীর নামে লিখে দেওয়া হয়েছে, যা কোম্পানি আইনবিরোধী।
শেখ তামান্না বলেন, “আমাদের মাকে হত্যার মতো ঘটনাকে আড়াল করতে এবং অনৈতিক সম্পর্ক লুকাতে তিনি বারবার প্রতারণা ও আত্মসাতের আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাবা আমাকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমার অবস্থাও আমার মায়ের মতো হবে।”
দুই মেয়ে অভিযোগ করেন, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বিএমএ’র শীর্ষ পদে থেকে ডা. বাহারুল আলম রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বদলি-বাণিজ্য, পদ বাণিজ্য ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এমনকি তিনি নিজের বাসা ও বিএমএ ভবন ব্যবহার করে তথাকথিত ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা দাবি করেন, পারিবারিক ও সামাজিক মহলে একাধিকবার বিষয়টির সমাধান চেষ্টা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। বরং উল্টোভাবে হেনা রানী ভৌমিক ও তার স্বামী প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।
অন্যদিকে, গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডা. শেখ বাহারুল আলম সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “১৯৮৯ সালে আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের তদন্তেও তা প্রমাণিত। আমার মেয়েরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছে এবং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কোম্পানির পরিচালকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে(শেখ তামান্না আলম) এমডি পদ থেকে সরিয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমি এই শহরের মানুষের কাছে পরিচিত। গত ৪০ বছরে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ কেউ তুলেনি। মেয়েদের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, প্রতিটির প্রমাণ আমার কাছে আছে।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে দুই মেয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাবার প্রভাব ও অনৈতিক চক্রের কারণে তারা যেকোনো সময় হামলা, গুম বা হত্যার শিকার হতে পারেন। এ অবস্থায় তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও সাংবাদিক সমাজের হস্তক্ষেপ চান।
শেখ তামান্না আলম বলেন, “আমার উদ্দেশ্য কারো ব্যক্তিগত জীবন আঘাত করা নয়। পরিবারের সম্মান, মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ রক্ষা করার দায়বদ্ধতা থেকেই আজ আপনাদের সামনে এসেছি। আমি ন্যায়বিচার চাই।”