- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ঢাকা, ২৯ আগস্ট ২০২৫: শুক্রবার রাতে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তার অনুসারীরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগ জানিয়েছে, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গণ অধিকার পরিষদের একটি মিছিল জাপা কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও রাত সোয়া ৮টার দিকে গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা দ্বিতীয় দফায় জাপা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন, যা পুনরায় সংঘর্ষের সূত্রপাত করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের সময় জাপা এবং গণ অধিকার পরিষদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে প্রথমে জাপা নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয়। এরপর গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ঘটনাস্থল ছাড়ার জন্য ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থান ত্যাগ না করায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এতে নুরুল হক নুরসহ গণ অধিকার পরিষদের অনেক নেতা-কর্মী আহত হন। এই সংঘাত দ্রুত সহিংস রূপ ধারণ করে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:
“সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
কাকরাইলে দুটি রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে
ঢাকা, ২৯ আগস্ট ২০২৫ (শুক্রবার): আজ রাত আনুমানিক ৮ টায় রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেড়ে গেলে তারা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয় এবং এতে কয়েকজন সদস্য আহত হন।
ঘটনার শুরুতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে স্থান ত্যাগ করার জন্য ও দেশের বিদ্যমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার অনুরোধ জানায়। তবে বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও কতিপয় নেতাকর্মীরা তা উপেক্ষা করে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করে। তারা সংগঠিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় এবং আনুমানিক রাত ৯ টার দিকে মশাল মিছিলের মাধ্যমে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি করে। এ সময় তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়ারও চেষ্টা চালায়। এছাড়াও বিজয়নগর, নয়াপল্টন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শান্তিপূর্ণ সমাধানের সকল চেষ্টা তারা অগ্রাহ্য করে। ফলস্বরূপ, জননিরাপত্তা রক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বল প্রয়োগে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য আজকের উদ্ভূত ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্য আহত হয়।
সকল ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করছে এবং জনমনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা আনয়নে সকল ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত রয়েছে। জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সর্বদা বদ্ধপরিকর।”
বর্তমানে কাকরাইল, বিজয়নগর, নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে।