- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ১৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি। আসিফ মাহমুদ তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, যেটি ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, আন্দোলনের সময় সরকার সুপরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা ও ‘ব্লক রেইড’ চালিয়ে ব্যাপকভাবে ছাত্র ও তরুণদের গ্রেপ্তার করেছিল। “সেসময় আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দমন-পীড়নের নামে দেশে ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়,” বলেন আসিফ মাহমুদ।
তিনি আরও জানান, ১৯ জুলাই ২০২৪ সালে গুলশান এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য ভিডিও বার্তা দিতে চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হলে তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করা হয়। পরে ক্যান্টনমেন্টের আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, সেখানেই তাঁকে আটক রাখা হয়েছিল।
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ২৬ জুলাই গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তাঁকে ও অন্যান্য আন্দোলন সমন্বয়কদের তুলে নেয় ডিবি। তখন ডিবির কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ও হুমায়ুন কবীর জানান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলন না থামালে ‘জীবিত রাখা হবে না’ এই হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, ৪ আগস্ট শাহবাগে সমাবেশে পুলিশ গুলি চালায়, যাতে চারজন নিহত হন। এরপর দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সমর্থিত সংগঠনগুলোর বাধা এড়াতে ৫ আগস্টই হঠাৎ করে কর্মসূচি এগিয়ে আনা হয়। সেদিন চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে তাঁর চোখের সামনেই দুই আন্দোলনকারী নিহত হন।
চানখাঁরপুল হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আটজন পুলিশ সদস্য আসামি হিসেবে রয়েছেন। এর মধ্যে চারজন কারাগারে ও চারজন পলাতক। মামলাটির বিচার করছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।