- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
জুলাই মাসের ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থানের পর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলো গণঅধিকার পরিষদ। সংগঠনটি আজ এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বিপ্লবের প্রকৃত অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা এবং স্বীকৃতি ছাড়া ঘোষণাপত্রকে তারা প্রত্যাখ্যান করবে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনের আল রাজি কমপ্লেক্সে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অবস্থান তুলে ধরেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা প্রথার বিলুপ্তি হয়। কিন্তু চলতি বছরের ৫ জুন হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে আবার কোটা ফিরিয়ে আনার পথ তৈরি হলে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। একপর্যায়ে সেই আন্দোলন রূপ নেয় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে এবং culminates into গণ–অভ্যুত্থান।”
তিনি আরও বলেন, “এ অভ্যুত্থান শুধু গত ৩৬ দিনের নয়, এটি ১৪-১৫ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী প্রতিবাদ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির আপসহীন ভূমিকা—সবকিছুর সম্মিলিত পরিণতি হলো এই ‘জুলাই বিপ্লব’। তাই শুধু ৩৬ দিনের প্রেক্ষাপটে ঘোষণাপত্র রচনা করলে, সেটা হবে একটি ঐতিহাসিক ভুল।”
রাশেদ খান অভিযোগ করে বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের সময় ও তারিখ নির্ধারণ করলেও আন্দোলনের মূল অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যায়নি। এতে প্রমাণ হয়, ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে একপাক্ষিকতা ও রাজনৈতিক স্বার্থই প্রাধান্য পাচ্ছে।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “জুলাই কারও একার নয়—এটি আমাদের সবার। একদলীয় খুশির খাতিরে যদি ঘোষণাপত্র তৈরি হয়, তবে তা হবে ১৯৭১ সালের ইতিহাস বিকৃতির পুনরাবৃত্তি। এতে ‘জুলাই চেতনা’কে দলীয় বলয়ে আটকে ফেলার আশঙ্কা তৈরি হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক, ছাত্র প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা বলেন, ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ফসলের স্বত্ব এককভাবে কেউ নিতে পারে না। সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য সবার অংশগ্রহণ ও সম্মান থাকা জরুরি।
এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘোষণাপত্র ঘিরে সৃষ্টি হওয়া এ বিতর্ক ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক ঐক্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হয়ে উঠছে।