Friday, December 5, 2025

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির সাক্ষাতের সম্ভাবনা


প্রতীকী ছবিঃ বিএনপি (সংগৃহীত)

স্টাফ রিপোর্টার | PNN: 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার বাস্তবায়নের সুপারিশকে ঘিরে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পড়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। কমিশনের কিছু প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা করলেও দলটি এখনো তা সরাসরি প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এমন অবস্থানে বিএনপি পড়েছে যেখানে “না” বললে সংস্কারবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঝুঁকি, আর “হ্যাঁ” বললে রাজনৈতিক পরাজয়ের ইঙ্গিত তৈরি হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গত দুই দিনে একাধিক বৈঠক হয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কমিশনের সুপারিশের রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করলেও, এখনো কোনো চূড়ান্ত অবস্থান ঠিক হয়নি।

দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখালে বিএনপিকে সংস্কারপ্রক্রিয়ায় “বাধা সৃষ্টিকারী” হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে। তাই আপাতত সংযমী অবস্থান ধরে রেখে সরকারের ওপর পাল্টা চাপ তৈরির কৌশল নেওয়ার চিন্তা করছে দলটি।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, কমিশনের কিছু প্রস্তাব এমনভাবে সাজানো হয়েছে যা কার্যকর হলে ভবিষ্যৎ সরকার প্রশাসনিকভাবে সীমাবদ্ধ অবস্থায় পড়তে পারে। তবে দলটির একাংশ মনে করছে, সরাসরি বিরোধিতা না করে বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করাই হবে বেশি কার্যকর রাজনৈতিক কৌশল।

বিএনপির প্রধান আপত্তি তিনটি বিষয়ের ওপর—গণভোটের সময় নির্ধারণ, ভিন্নমতের অনুপস্থিতি এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের প্রক্রিয়া। এসব ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিপরীত অবস্থান নিয়েছে।

একই সঙ্গে বিএনপি মনে করছে, সরকার ও ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদকে দুটি ধাপে ভাগ করে বিএনপিকে কৌশলগতভাবে কোণঠাসা করতে চেয়েছে। প্রথম ধাপ ছিল সংস্কার প্রস্তাব তৈরি, দ্বিতীয় ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ—যেখানে বিএনপির মতামত পর্যাপ্তভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা প্রত্যাখ্যানের কথা বলিনি।” তিনি ইঙ্গিত দেন, প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আপত্তির বিষয়গুলো জানানো হবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিএনপি বর্তমানে এক ধরনের “কৌশলগত ভারসাম্য” বজায় রাখছে। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “বিএনপি এখন এমন অবস্থায় আছে, যেখানে তারা সংস্কারবিরোধী হিসেবে পরিচিতি পেতে চায় না, আবার সব প্রস্তাব মেনে নেওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা কার্যত এক সংকটে রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, কমিশনের সুপারিশগুলোতে সংশোধনের সুযোগ আছে, তবে গণভোটে ‘হ্যাঁ’–‘না’ বিকল্পের উপস্থাপন নিয়েও জটিলতা তৈরি হতে পারে।

সব মিলিয়ে বিএনপি এখন এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে দলটি রাজনৈতিকভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে চায়, আবার নির্বাচন-প্রক্রিয়াও ভেস্তে যেতে দিতে চায় না। তাই তারা আপাতত সংযম ও কৌশলের মিশ্রণেই এগোচ্ছে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন