Friday, December 5, 2025

বোমা বর্ষণ ও গুলিবর্ষণে উত্তপ্ত গাজা, যুদ্ধবিরতির দাবি সত্ত্বেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত


ছবিঃ গাজার বর্তমান অবস্তা (সংগৃহীত)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN 

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দুই দিন পরও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ভোর থেকে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও আর্টিলারি দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস ও উত্তর গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

গাজা শহরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলি বাহিনী মাঝেমধ্যেই ভারী গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। খাদ্য ও আশ্রয়ের সংকটে থাকা সাধারণ মানুষ এখন আশঙ্কা করছেন, পূর্ণমাত্রার বোমা হামলা আবারও শুরু হতে পারে।

মাঠের সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির পূর্বাঞ্চল শুজাইয়া ও তুফাহ এলাকায় বোমাবর্ষণ করে। এর আগের রাত থেকেই দক্ষিণের খান ইউনুস অঞ্চলে টানা হামলা চলছিল। এ ঘটনায় অন্তত একজন ফিলিস্তিনি নিহত ও তার ভাই গুরুতর আহত হয়েছেন বলে আল-আহলি আরব হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের বরাতে জানা গেছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি গোপন প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সামরিক ইউনিটগুলোর বিরুদ্ধে গাজায় শত শত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। লিহি আইনের আওতায় এই ধরনের অভিযুক্ত বাহিনীর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধ রাখার বিধান রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ক্ষেত্রে এই পর্যালোচনা প্রক্রিয়া “বিশেষ ছাড়” হিসেবে আলাদা নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে।

জাতিসংঘের নারী ও শিশু বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি রিম সালেম এক বিবৃতিতে বলেন, “ফিলিস্তিনে যে নিষ্ঠুরতা ঘটছে, তা গোটা বিশ্বে মানবিক মূল্যবোধের প্রতি উদাসীনতা তৈরি করছে। হাজার হাজার নারী ও শিশু নিহত হওয়ার পরও বিশ্ব নীরব।” তিনি আরও বলেন, “বর্তমান আইনি কাঠামো এত ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বিবরণ দিতে অক্ষম।”

এদিকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় কৌনিন এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দেশটির জাতীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে। নভেম্বর ২০২৪ সালে ইসরায়েল-লেবাননের মধ্যে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েল বারবার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

যুক্তরাজ্যের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (SOAS)-এর সিনেট এক বিবৃতিতে গাজায় “স্কলাস্টিসাইড” বা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পিত ধ্বংসের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার সব বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস এবং ৯৭ শতাংশ স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত বা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে অন্তত ১৭ হাজার শিক্ষার্থী ও ২২৬ শিক্ষক-শিক্ষাবিদ নিহত হয়েছেন।

গাজা সিটির সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, যুদ্ধবিরতির পর তিন সপ্তাহ পার হলেও সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাজারে খাদ্যদ্রব্যের অভাব চরম আকার নিয়েছে। “চকলেট ও বিস্কুটে বাজার ভরা, কিন্তু মানুষ পাচ্ছে না প্রোটিন ও ওষুধ,” বলেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক লুসিয়ানো জাকারার মতে, “ইসরায়েলের এই হামলাগুলো সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং মানবতার পরিপন্থী। এটি কেবল গাজার নিরপরাধ মানুষ, শিশু ও পরিবারগুলোর ওপরই আঘাত হানছে।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যত নামমাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ইসরায়েলি আগ্রাসন থামার কোনো ইঙ্গিত এখনো দেখা যাচ্ছে না।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন