- ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাশক্তির দখলদারি ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “দিল্লির আধিপত্যবাদের কালো ছায়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক নীতি ও কূটনীতি থেকে শুরু করে সামনের নির্বাচনের ওপর পর্যন্ত পরাশক্তির চক্রান্ত চলছে, যার ফলে দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ হতে বসেছে।”
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত ‘জুলাই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেন, ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, “নানান ফিলোসফি ও রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের নামে দেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। এতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসন পরিলক্ষিত হলেও ফ্যাসিবাদের ডানা এখনও বেঁকে রয়েছে। প্রশাসনের নানা স্তরে ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে এখনও ফ্যাসিবাদের চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাই একজন ফ্যাসিস্ট গেলেও দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের অবসান হয়নি।”
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব করার প্রচেষ্টা যখন চলছে, তখনই একটি অপশক্তি সেটিকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, “কিছুটা এগিয়ে আবার পিছিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়া। যারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনাকে রুখতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”
সরকারের দেয়া ভোটের সময়সীমাকে জামায়াত বিশ্বাসযোগ্য মনে করলেও, এই ভোট যেন আগের মতো না হয় তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি।
গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক দলগুলো নিজের মতামত দিচ্ছে, যা সংসদীয় প্রক্রিয়ার অংশ। তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এখনও শেষ হয়নি বলে মনে করেন তিনি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এখনই মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমত হোক এবং বিভেদ ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, “কিছু কিছু মিডিয়া ও কর্পোরেট হাউজ থেকে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করা হচ্ছে, যা জাতির মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।”
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন— বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহসভাপতি এ কে এম মহসিন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।