Friday, October 17, 2025

গুগল বনাম অ্যাপল: দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা ও ব্যবসায়িক স্বার্থের মধ্যে মানচিত্র রপ্তানি সংকট


ছবিঃ উচ্চ-রেজোলিউশনের মানচিত্র ডেটা (সংগৃহীত । ইউরি মোটোভ / গেটি ইমেজেস)

স্টাফ রিপোর্টার | PNN:

দক্ষিণ কোরিয়া এখন গুগল এবং অ্যাপলের আবেদনের পরবর্তী সিদ্ধান্তের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যেখানে তারা দেশ থেকে উচ্চ-রেজোলিউশনের মানচিত্র ডেটা বিদেশে রপ্তানি করার অনুমতি চাইছে। এই মানচিত্রগুলি ১:৫,০০০ স্কেলে তৈরি, যা বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তারিত এবং সড়ক, ভবন ও গলিপথের চিত্রণ করতে সক্ষম। তবে, এটি অনুমোদন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু নিয়ন্ত্রক এবং নিরাপত্তাজনিত বাধা রয়ে গেছে।

এ সপ্তাহের শুরুর দিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় সংসদ প্রতিরক্ষা কমিটি গুগল কোরিয়ার একটি সংসদীয় অডিট করেছে। আইনপ্রণেতারা গুগলের স্থানীয় মানচিত্র ডেটার জন্য আবেদনের সময় দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই সেশনের কয়েক মাস পরেই সিউল গুগলের আবেদন স্থগিত করে এবং পরবর্তী মাসে রিভিউ চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

একজন পলিসি নির্মাতা সতর্ক করে বলেছেন যে, গুগলের স্যাটেলাইট মানচিত্রগুলি যদি বাণিজ্যিক চিত্রণ ও অনলাইন ডেটার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর গোপন স্থাপনাগুলি উন্মুক্ত হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে প্রযুক্তিগতভাবে এখনও যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে, তাই সরকার এমন স্থানে সুরক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে চায়।

সিউল সরকারের আশা করা হচ্ছে যে, তারা নভেম্বরে অথবা তার আগেই গুগল মানচিত্র রপ্তানি অনুমতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। গত মাসে, দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমি, অবকাঠামো এবং পরিবহন মন্ত্রণালয় ৬০ দিনের জন্য রিভিউ সময়সীমা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।

গুগল ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের কাছে আবেদন করে, যাতে তারা ১:৫,০০০ স্কেলের মানচিত্র ডেটা ব্যবহার করতে পারে এবং তা দেশ ছাড়া অন্যান্য সার্ভারে রপ্তানি করতে পারে। বর্তমানে, গুগল ১:২৫,০০০ স্কেলে মানচিত্র ব্যবহার করে যা মাত্র কিছু নির্দিষ্ট স্থানের চিত্রণ করে। এর বিপরীতে, স্থানীয় নেভিগেশন অ্যাপগুলো যেমন নেভার ম্যাপ, টি ম্যাপ এবং কাকাও ম্যাপ ১:৫,০০০ স্কেলে আরও বিস্তারিত ডেটা সরবরাহ করে, যা তাদের বাজারে বড় প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেয়।

এদিকে, অ্যাপলও গুগলের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার মানচিত্র ডেটা রপ্তানির জন্য আবেদন করেছে। ২০২৩ সালে প্রথম আবেদন জানানো হলেও, জুনে তারা আবারো এই ডেটা রপ্তানির অনুমতি চেয়েছে। তবে, অ্যাপল স্থানীয় সার্ভার ব্যবহার করে, যা সরকারকে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ দেয়। এদিকে, গুগল তাদের সার্ভারগুলি দক্ষিণ কোরিয়ার বাইরে রাখে, যা সরকারের জন্য আরও উদ্বেগের কারণ।

এছাড়াও, অ্যাপল গুগলের তুলনায় সরকার-নির্ধারিত সীমাবদ্ধতাগুলি মানতে বেশি নমনীয় হতে পারে, যেমন সেন্সিটিভ সাইটগুলো ব্লার করা বা তাদের রেজোলিউশন কমানো। অ্যাপল টিএম্যাপকে তাদের প্রধান মানচিত্র উৎস হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে।

গুগল এবং অ্যাপল উভয়ই তাদের মানচিত্র আপডেট করছে যাতে আরও বিশদ ভবন, গলিপথ এবং সড়ক সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করা যায়, যা অটোনোমাস গাড়ি এবং ড্রোন ডেলিভারির মতো উন্নত প্রযুক্তির জন্য সহায়ক হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া এই উচ্চ-রেজোলিউশন মানচিত্র ডেটা রপ্তানি করলে এটি পর্যটন, স্থানীয় ব্যবসা এবং স্মার্ট সিটি উদ্ভাবনকে উত্সাহিত করবে, তবে সমালোচকরা সতর্ক করেছেন যে এটি মূলত মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য লাভজনক হতে পারে, যা স্থানীয় ব্যবহারকারীদের জন্য সীমিত সুবিধা নিয়ে আসবে।

এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার ভূ-স্থানিক তথ্য ব্যবস্থাপনা আইন (গেজিও আইন) অনুযায়ী, সরকারী মানচিত্র এবং স্যাটেলাইট ডেটা বিদেশে রপ্তানি করার জন্য পুরো মন্ত্রিসভার অনুমতি প্রয়োজন। ২০১৪ সালে এই আইনটি কার্যকর হয় এবং এটি দেশের ভূ-স্থানিক ডেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো প্রদান করে।

গুগল এবং অ্যাপল উভয়ই এই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে, এবং দক্ষিণ কোরিয়া সরকার তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আরও সময় নিতে পারে, তবে এটি প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন