- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্ট: PNN
অস্ট্রেলিয়ায় কিশোরদের জন্য বিশ্বের প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের Instagram, Facebook ও Threads থেকে সরিয়ে দেওয়া শুরু করেছে মেটা।
গত মাসে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করেছিল, ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী যেসব ব্যবহারকারী শনাক্ত হয়েছে, তাদের অ্যাকাউন্ট ৪ ডিসেম্বর থেকে ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এ প্রক্রিয়ার আওতায় আসবে। Threads-এর অ্যাক্সেস যেহেতু ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ওপর নির্ভরশীল, তাই এ প্ল্যাটফর্মও স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার নতুন আইন ১০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এতে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে ১৬ বছরের নিচে শিশুদের অ্যাকাউন্ট রোধে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ ৪৯.৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
মেটার এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, নতুন আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। তবে প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, কেবলমাত্র প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর দায় চাপিয়ে না দিয়ে অ্যাপ স্টোর থেকেই ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা উচিত। এতে কিশোরদের প্রতিটি অ্যাপে আলাদা করে বয়স যাচাইয়ের ঝামেলাও কমবে।
মেটা জানিয়েছে, যেসব কিশোরের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হবে, তারা আগে থেকেই তাদের ছবি, ভিডিও ও মেসেজ ডাউনলোড করে রাখার সুযোগ পাবে। কেউ যদি ভুলভাবে ১৬ বছরের কম হিসেবে শনাক্ত হওয়ার অভিযোগ করে, সে ভিডিও সেলফির মাধ্যমে বয়স যাচাইয়ের আবেদন করতে পারবে। পরিচয়পত্রও জমা দেওয়া যাবে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় মেটার প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও ইউটিউব, এক্স, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, রেডিট, কিক ও টুইচ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান সরকার বলছে, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষাই এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য। তবে সমালোচকরা বলছেন, এতে অনেক কিশোর–কিশোরী সামাজিক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং কম নিয়ন্ত্রিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ঝুঁকতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী আনিকা ওয়েলস বলেছেন, শুরুতে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অ্যালগরিদমিক আসক্তি থেকে রক্ষা করবে। তিনি উল্লেখ করেন, স্মার্টফোন পাওয়ার মুহূর্ত থেকেই শিশুরা যেন “ডোপামিনের নেশায়” আটকে পড়ছে।
এদিকে, কম পরিচিত অ্যাপ Lemon8 এবং Yope-এ শিশুদের ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে সরকার সতর্ক নজর রাখছে। Yope কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পুরোপুরি ব্যক্তিগত মেসেজিং অ্যাপ হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না।
ইউটিউব নতুন আইনকে “তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত” বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করলে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার অসম্ভব হয়ে পড়বে এবং প্ল্যাটফর্মটি কম নিরাপদ হয়ে উঠবে।
অস্ট্রেলিয়ার এই আইন বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছে। সরকারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের ৯৬ শতাংশই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এবং তাদের বেশির ভাগই ক্ষতিকর কনটেন্ট দেখার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু অনলাইন গ্রুমিং, সাইবার বুলিং ও সহিংস কনটেন্টের শিকার হয়েছে।