- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় নির্মম এক হত্যাকাণ্ডে স্ত্রীর প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মো. নূরুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। চার মাসের সন্তানের কান্নার শব্দে তড়িঘড়ি করে প্রতিবেশীরা ছুটে গেলে উঠে আসে হত্যাকাণ্ডের বিভৎস চিত্র। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযুক্ত নূরুল ইসলাম এখনো পলাতক।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার ভোরে শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে। তার আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতেই সুইটি আক্তার (২০) নামে ওই তরুণীকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। নিহত সুইটি ময়মনসিংহ জেলার চাকুয়া গ্রামের বাসিন্দা, নিহতের বয়স মাত্র ২০ বছর।
প্রায় দেড় বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে নূরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় সুইটির। বিয়ের পরেই শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। সুইটির আত্মীয়স্বজনের দাবি, স্বামী নূরুল ইসলাম নিয়মিতভাবে মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং টাকার জন্য প্রায়শই স্ত্রীকে মারধর করতো।
সুইটির মামা জসিম শেখ জানান, "আমার ভাগনিকে ছোটবেলায় মা হারানোর পর অনেক কষ্টে মানুষ করেছি। সে পড়ালেখা করছিল। বিয়ের পর থেকেই নির্যাতন সহ্য করছিল। আজ শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করলো না, তাকে পিটিয়ে মেরে ফেললো।"
সুইটির খালা আকলিমা বলেন, "চার মাসের শিশুটা এখন শুধু মায়ের দুধের জন্য কাঁদছে। এই নিষ্ঠুরতা কোনো মানুষ করতে পারে না।"
প্রতিবেশীরা জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে শিশুটির কান্না শুনে সন্দেহ হয়। তারা নূরুল ইসলামের ঘরে গিয়ে দেখতে পান, সুইটির নিথর দেহ পড়ে আছে, শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন, মাথা ও পায়ে ছিল গুরুতর জখম। শিশুটির গায়েও রক্ত লেগে ছিল।
বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার ভোরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী। তারা নূরুল ইসলামের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক জানান, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং শ্বাসরোধের আলামতও মিলেছে। এ ঘটনায় নিহতের শাশুড়ি জুবাইদা খাতুনকে (৫২) আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তিনটি মাদক মামলা রয়েছে।
ওসি আরও জানান, "নূরুল ইসলাম ঘটনার পরপরই পলাতক হয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।"
চার মাস বয়সী শিশুটি এখন মায়ের ছায়াহীন পৃথিবীতে। তার কোলজুড়ে যে মা ছিল, এখন সেই কোল শূন্য। সমাজ ও রাষ্ট্র কীভাবে এই শিশুটিকে রক্ষা করবে, সে প্রশ্নও নতুন করে উঠছে।