- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্ট: PNN
দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা বর্তমানে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে এক সময় সুনাম অর্জন করা এই প্রতিষ্ঠান এখন মূলত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের সঙ্গে সীমাবদ্ধ। তবে সেই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনায়ও চলছে নিয়মের বাইরে আমানত সংগ্রহ, অতিরিক্ত সুদ দেওয়া ও অর্থের অপব্যবহার।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)-এর অনুমোদন ছাড়া প্রশিকা দীর্ঘদিন ধরে সদস্যদের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ তার নিজস্ব পুঁজির ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। তবে প্রশিকার পুঁজি মাত্র ১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা হলেও তারা ৫৬ গুণের বেশি আমানত সংগ্রহ করেছে। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, ১,২৩৫ কোটি টাকার মোট আমানতের বিপরীতে তাদের তরলতা মাত্র ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা প্রয়োজনীয় পরিমাণের তুলনায় প্রায় শূন্য।
এছাড়া এমআরএর নিয়ম অনুযায়ী মোট সদস্যের ৭০ শতাংশকে ঋণগ্রহীতা হতে হবে। কিন্তু প্রশিকায় ঋণগ্রহীতা সদস্যের হার মাত্র ৪৬ শতাংশ।
প্রধান নির্বাহী (সিইও) নিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধিতেও প্রতিষ্ঠানটি নিয়ম ভঙ্গ করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী, ৬৫ বছর বয়সী কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক এক মেয়াদে সর্বোচ্চ দুই বছর নিয়োগে থাকতে পারেন। তবে ২০১৮ সালে ৬৫ বছর পূর্ণ করা প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলামকে নিয়মিত কর্মী হিসেবে বহাল রাখা হয় এবং ২০২৩ সালে তার মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৭ পর্যন্ত করা হয়। এমআরএর বারবার ‘অবৈধ’ ঘোষণা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রশিকার গভর্নিং বডিতে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব রয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম হলেও পূর্বে আলোচিত ড. কাজী ফারুক আহমেদ প্রতিষ্ঠানটি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফারুক আহমেদের সময়কালে রাজনৈতিক স্বার্থ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও শাখা অফিস দখল ইস্যুর কারণে প্রতিষ্ঠান এক অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়।
এমন অনিয়ম ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে এমআরএ গত ৩০ অক্টোবর প্রশিকার গভর্নিং বোর্ডে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। এমআরএর কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেনকে এক বছরের জন্য এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর কাজ হবে প্রতিষ্ঠানটি এমআরএর নির্দেশনা ও নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা তা নিশ্চিত করা।
প্রশিকা ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সচেতনতা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে পথচলা শুরু করে। ১৯৯৯ সালে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করে এবং ২০১৩ সালে এমআরএ থেকে স্থায়ী নিবন্ধন লাভ করে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০০ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে।