- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-এর গবেষকরা এমন এক মৌমাছি-সদৃশ রোবট তৈরি করছেন, যার ওজন কাগজের ক্লিপের চেয়েও হালকা। ক্ষুদ্র এই যন্ত্রটি প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ বার পাখা ঝাপটাতে সক্ষম এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ দুই মিটার বেগে উড়তে পারে। শুধু তাই নয়, এটি মাঝ আকাশে ভেসে থাকা এবং হঠাৎ উল্টে যাওয়ার মতো জটিল কৌশলও করতে পারে।
গবেষক ই-হসুয়ান “নেমো” সিয়াও বলেন, “আমরা মূলত ভোমরা মৌমাছির অবিশ্বাস্য গতিবিধি অনুকরণ করার চেষ্টা করছি।” তাঁর মতে, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কৃত্রিম পরাগায়নে কাজে লাগতে পারে— এমনকি অন্য গ্রহেও।
এমআইটি’র সহযোগী অধ্যাপক কেভিন চেন জানান, প্রকৃত মৌমাছিকে প্রতিস্থাপন নয়, বরং যেখানে মৌমাছি বাঁচতে পারে না, সেখানে এই রোবটকে কাজে লাগানোই তাঁদের লক্ষ্য। যেমন—অতিবেগুনি আলোতে ঘেরা উল্লম্ব খামার বা ওয়্যারহাউস ফার্মে ফসল উৎপাদনে এগুলো কার্যকর হতে পারে।
শুধু মৌমাছি নয়, প্রাণিজগতের অনুপ্রেরণা নিয়ে আরও নানা রোবট তৈরি হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা টিকটিকি-অনুপ্রাণিত রোবট বানিয়েছেন, যা প্রয়োজনে নিজ অঙ্গচ্ছেদ করতে পারে—ভূমিকম্প বা ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজে এটি সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার চুং-আং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা শুঁয়োপোকার মতো বাঁকানো ও হামাগুড়ি দিতে সক্ষম নরম রোবট উন্মোচন করেছেন।
এমআইটি’র গবেষক সুহান কিম এমন কৃত্রিম পেশি উদ্ভাবন করেছেন, যা প্রসারিত ও সংকুচিত হয়ে মৌমাছি-রোবটের পাখা ঝাপটায়। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ—যার আকার হাতঘড়ির যন্ত্রাংশের মতো—এটিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
শুধু মৌমাছি নয়, দলটি ঘাসফড়িং-সদৃশ রোবটও তৈরি করেছে। এটি আকারে মানুষের বৃদ্ধাঙ্গুলির চেয়েও ছোট, কিন্তু এক লাফে ২০ সেন্টিমিটার ওপরে উঠতে পারে এবং ঘাস, বরফ কিংবা পাতার মতো বিভিন্ন পৃষ্ঠে সহজেই চলাচল করতে পারে। গবেষকদের মতে, এ ধরনের লাফানো রোবট উড়ন্ত রোবটের তুলনায় শক্তি সাশ্রয়ী।
উদ্ধার অভিযান, পাইপলাইন বা টারবাইন ইঞ্জিনের ভেতর অনুসন্ধানের মতো জটিল কাজে এসব ক্ষুদ্র রোবট ভবিষ্যতে ব্যবহার হতে পারে। তবে এখনো সেগুলো তারের মাধ্যমে শক্তি পায়। গবেষকরা বলছেন, ক্ষুদ্র ব্যাটারি সংযোজন এবং সেন্সর যুক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার মতো প্রযুক্তি পেতে আরও ২০-৩০ বছর সময় লাগতে পারে।
কেভিন চেনের ভাষায়, “পোকামাকড়ের চলন, আচরণ ও গঠনে কোটি বছরের বিবর্তনের জ্ঞান লুকিয়ে আছে। আমরা সেখান থেকেই ভবিষ্যতের প্রযুক্তির দিকনির্দেশনা পাচ্ছি।”
সুত্রঃ সিএনএন