- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
নিউইয়র্ক:
সিকোইয়া ক্যাপিটালের প্রভাবশালী পার্টনার শন ম্যাগুয়ারের সাম্প্রতিক ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে প্রযুক্তি জগতে। নিউইয়র্ক সিটির সম্ভাব্য প্রথম মুসলিম মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানিকে “ইসলামপন্থী” এবং এমন একজন যিনি “একটি মিথ্যাচারী সংস্কৃতি থেকে এসেছেন”— এমন মন্তব্য করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিম এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা।
জুলাই মাসের শুরুতে এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ দেয়া শন ম্যাগুয়ারের এক পোস্টে দাবি করা হয়, মামদানি ও তার পিতা, বিশিষ্ট অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি, “তৃতীয় ইনতিফাদার জন্য উচ্ছ্বসিত” এবং মামদানি “সন্ত্রাসীদের পক্ষাবলম্বন করেন”। সেই পোস্ট ইতোমধ্যেই ৫.৬ মিলিয়নের বেশি বার দেখা হয়েছে। এ ছাড়াও তিনি মামদানির কলেজ অ্যাপ্লিকেশনে জাতিগত পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেন, যা ২০০৯ সালের একটি পুরাতন তথ্য ঘেঁটে প্রকাশ করা হয় নিউইয়র্ক টাইমসে।
এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জুলাই, বিশ্বজুড়ে এক হাজারেরও বেশি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী একটি খোলা চিঠিতে সিকোইয়ার কাছে ম্যাগুয়ারের মন্তব্যের নিন্দা জানান এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। চিঠিতে বলা হয়েছে, “যারা প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে, তারা এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারে না, যাদের পার্টনাররা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয় এবং ঘৃণা ছড়ায়।”
মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
মধ্যপ্রাচ্যের স্টার্টআপ কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর বেশ কিছু স্টার্টআপ, যেমন সৌদি আরবের লিন টেকনোলজিস এবং মিশরের টেলডা, ইতিপূর্বে সিকোইয়া ইন্ডিয়া থেকে অর্থায়ন পেয়েছে। এই অঞ্চলের উদ্যোক্তারা মনে করেন, ম্যাগুয়ারের বক্তব্য শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং এটি প্রযুক্তি শিল্পে প্রচলিত একটি গভীর ইসলামভীতির প্রতিফলন।
তাব্বির সিইও হোসাম আরব বলেন, “ম্যাগুয়ারের মন্তব্য অনেকের জন্য চোখ খুলে দিয়েছে। কারণ এটি কোনো ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানের কথা নয়, এটি বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সিকোইয়ার পার্টনারের মুখ থেকে এসেছে।”
সিকোইয়া ও ম্যাগুয়ারের অবস্থান
সিকোইয়া এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। অন্যদিকে ম্যাগুয়ার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আমি ইসলামপন্থীদের কথা বলেছি, সব মুসলিমদের না। যারা ইসলামপন্থী নন, তাদের কষ্ট দিয়ে থাকলে আমি দুঃখিত।” তবে একই ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, মামদানি শুধুমাত্র সমাজতন্ত্রী নন, তার আদর্শ আরও গভীর রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ম্যাগুয়ারের অতীত সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপ ঘিরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তিনি গাজার শিশু হত্যার ভিডিওকে “পুতুল” বলে উড়িয়ে দেন, জাতিসংঘকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” বলে উল্লেখ করেন এবং স্বঘোষিত ইসলামবিদ্বেষী ডানপন্থী অ্যাকটিভিস্ট লরা লুমারের পোস্ট শেয়ার করেন।
ইসলামভীতি ও গাজা যুদ্ধ
এই বিতর্কের পেছনে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্বজুড়ে মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়ের প্রতি বৈরী মনোভাবের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধির বিষয়টি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তুলে ধরেছে। আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটির নির্বাহী পরিচালক আবেদ আয়ুব বলেন, “আমাদের কমিউনিটির প্রতি ঘৃণা ছড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (CAIR) তাদের ২০২৫ সালের নাগরিক অধিকার প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৪ সালে তারা ৮,৬৫৮টি বৈষম্য ও বিদ্বেষ সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছে— যা রেকর্ড পরিমাণ।
অর্থনৈতিক চাপ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
চিঠির সইকারীদের দাবি, যদি সিকোইয়া ম্যাগুয়ারের বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেয়, তাহলে তারা সিকোইয়ার লিমিটেড পার্টনারদের (LPs)— অর্থাৎ যারা অর্থ প্রদান করেন কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেন না— যোগাযোগ শুরু করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে ধনী পারিবারিক দপ্তর ও সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
তবে কেউ কেউ মনে করেন, শুধু বক্তব্যের প্রতিবাদ করেই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এক উদ্যোক্তা বলেন, “আমরা রাজনৈতিক পক্ষ নিচ্ছি না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু প্রতিষ্ঠান চুপ থেকে মৌন সম্মতি দিচ্ছে ঘৃণার রাজনীতিকে।”
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন