Tuesday, October 14, 2025

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নামমাত্র ক্ষমতা হস্তান্তর: নির্বাচন সামনে রেখে কৌশলী পুনর্বিন্যাস


ফাইল ছবি: মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ইয়াঙ্গুনে শহীদ দিবসের ৭১তম বার্ষিকীতে উপস্থিত (সংগৃহীতঃ এএফপি)

সামরিক শাসনের তিন বছরেরও বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী একটি বেসামরিক-নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে কার্যত ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছেন অভ্যুত্থানকারী সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং, যিনি এখন দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

সরকারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় জানানো হয়, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর জারি করা জরুরি ক্ষমতা সম্পর্কিত ডিক্রি বাতিল করা হয়েছে এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন ও একটি বিশেষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি প্রকৃত ক্ষমতা হস্তান্তর নয়, বরং নির্বাচনকে সামনে রেখে সামরিক বাহিনীর পুরনো কাঠামোকে নতুন নামে সাজিয়ে তোলার প্রচেষ্টা।

"তারা শুধু পুরনো খেলোয়াড়দেরই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নতুন নাম দিচ্ছে," বলেন মিয়ানমার-বিষয়ক বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন। "এই প্রশাসন আগের মতোই দমনমূলক এবং নির্যাতন চালিয়ে যাবে।"

সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জাও মিন তুন জানিয়েছেন, ২০২১ সাল থেকে সাতবার বাড়ানো জরুরি অবস্থার মেয়াদ বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে এবং সেটি আর নবায়ন করা হয়নি। "আগামী ছয় মাস নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির সময় হিসেবে বিবেচিত হবে," বলেন তিনি।

তবে আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে 'প্রহসন' হিসেবে দেখছে, যেখানে প্রকৃত বিরোধীদলগুলো হয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বা তারা বয়কট করবে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আং সান সুচির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে দেশটিতে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ চলছে এবং বিদ্রোহীদের দমন করতে সেনাবাহিনী ব্যাপক দমনপীড়ন চালাচ্ছে।

গত বছর দেশজুড়ে ভোটার তালিকা তৈরির জন্য আদমশুমারি করতে গিয়ে সামরিক সরকার মাত্র ৩৩০টির মধ্যে ১৪৫টি টাউনশিপে তা করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সরকারের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই।

সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং জানিয়েছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বিভিন্ন অঞ্চলে ধাপে ধাপে ভোটগ্রহণ হবে। এদিকে অন্তত ৬০টি টাউনশিপে আবারও মার্শাল ল ও জরুরি অবস্থা জারি করা হবে, যেগুলোর বেশিরভাগ সীমান্তবর্তী এবং বিদ্রোহপ্রবণ এলাকা।

চীন বলেছে, তারা মিয়ানমারের "জাতীয় বাস্তবতা অনুযায়ী উন্নয়ন পথ" এবং "দেশীয় রাজনৈতিক অগ্রগতি"কে সমর্থন করে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনী ৬,০০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং ২০,০০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করেছে। এছাড়া ৩.৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ এখন দেশটির অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত।

সেনাবাহিনী এসব অভিযোগকে ‘পশ্চিমা অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা দাবি করে, ২০২০ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগেই অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল, যদিও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাননি।

তথ্যসূত্রঃ রয়টার্স

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন