Friday, December 5, 2025

মোদির সঙ্গে পুতিনের বৈঠককে ঘিরে নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ


ছবিঃ মোদি ও পুতিনের মধ্যে আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে (সংগৃহীত | বিবিসি নিউজ)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | PNN

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন। এই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে বার্ষিক শীর্ষ বৈঠক, যেখানে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্য সহযোগিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারত–রাশিয়া সম্পর্ক বহু দশকের পুরোনো। তবে এবারের বৈঠকের গুরুত্ব আরও বেশি। কারণ ওয়াশিংটনের সঙ্গে দিল্লির বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়ছে এবং একই সময়ে রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপে নতুন বাজার খুঁজছে।

রাশিয়ার তেল বাজার ইউরোপে সীমিত হয়ে পড়ায় ভারত তাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতাদের মধ্যে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেইন আক্রমণের আগে যেখানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির মাত্র ২–৩ শতাংশ ছিল রাশিয়া নির্ভর, যুদ্ধ শুরুর পর তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে মার্কিন প্রশাসনের অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপের পর সাম্প্রতিক সময়ে সেই আমদানি কমে এসেছে। পুতিন চান ভারত যেন আবার আগের মতোই রাশিয়ার জ্বালানি বাজারে স্থিতিশীল ক্রেতা হিসেবে থাকে।

প্রতিরক্ষা খাতও আলোচনার বড় অংশ। দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রধান প্ল্যাটফর্মগুলো রুশ প্রযুক্তিনির্ভর। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বিকল্প উৎসে ঝুঁকছে, তবুও সুখই-৩০ যুদ্ধবিমান থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতা এখনো রাশিয়ার সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল।

সূত্র বলছে, ভারত আপগ্রেডেড এস-৫০০ সিস্টেম এবং পঞ্চম প্রজন্মের সু-৫৭ যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যা পাকিস্তানের নতুন স্টেলথ ফাইটার জে-৩৫ কেনাকে মোকাবিলা করার কৌশলের অংশ।

মোদির জন্য এই সফরটি এক ধরনের কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার সময়। একদিকে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহ্যগত সম্পর্ক বজায় রাখতে চান, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অংশীদারদের চাপও উপেক্ষা করতে পারছেন না।

মোদির সরকার চাইছে দিল্লির সিদ্ধান্ত যেন "কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন"-এর প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়, যেখানে কোনো পক্ষের প্রতি অন্ধভাবে ঝুঁকে না গিয়ে ভারতের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইউরোপের তিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক যৌথ নিবন্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ–অবস্থানের সমালোচনা করেছেন, যা স্পষ্ট সংকেত ভারতকে ঘিরে পশ্চিমা কূটনীতিতে চাপ বাড়ছে।

২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারত–রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৯ বিলিয়ন ডলার যার বড় অংশই তেল আমদানিনির্ভর। ভারতের উদ্বেগ এটি একটি বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি করছে।

দিল্লি চাইছে রাশিয়ার খুচরা ও শিল্প খাতে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশ বাড়াতে। খাদ্য, পোশাক, ইলেকট্রনিকস ও ভোক্তা–পণ্যের সম্ভাবনাময় বাজার হলেও এখনও সেখানে ভারতের উপস্থিতি সীমিত।

নীতিনির্ধারকদের মতে, এবারের বৈঠক থেকে মাঝারি ধরনের ফলাফল পাওয়া গেলেও তা জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্থির করবে। আর যদি দুই দেশ আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমঝোতায় পৌঁছায়, তবে তা আঞ্চলিক অর্থনীতি ও কৌশলগত ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন