Friday, December 5, 2025

মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া বৈঠক: ইউক্রেন ভূখণ্ড ইস্যুতে ‘কোনো সমঝোতা হয়নি’


ছবিঃ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২ ডিসেম্বর ২০২৫-এ মস্কোর ক্রেমলিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। (সংগৃহীত । আল জাজিরা । অ্যালেক্সান্ডার কাজাকভ/স্পুটনিক/এএফপি)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN 

মস্কোয় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকেও ইউক্রেনের দখলকৃত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। বর্তমানে ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে, এ বৈঠক সেই প্রচেষ্টারই অংশ।

মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ক্রেমলিন উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। তিনি জানিয়েছেন, “এখন পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। তবে মার্কিন পক্ষ যে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলো আলোচনার জন্য খোলা রয়েছে।”

উশাকভ আলোচনাকে “গঠনমূলক ও গুরুত্বপূর্ণ” বলে বর্ণনা করলেও তিনি জোর দিয়ে বলেন, সামনে ওয়াশিংটন ও মস্কো দুই পক্ষকেই দীর্ঘ ও কঠিন পথ অতিক্রম করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে তাদের প্রাথমিক ফাঁস হওয়া ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা সংশোধন করেছে। ওই খসড়া ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার পক্ষে ‘পক্ষপাতমূলক’ বলে কড়া সমালোচনা করেছিল। এর পাল্টায় ইউক্রেন ও ইউরোপ যে প্রস্তাব দেয়, পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

বৈঠকের আগে এক বিনিয়োগ ফোরামে বক্তৃতায় পুতিন ইউরোপীয় দেশগুলোকে যুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পশ্চিমারা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন শর্ত দিচ্ছে যা রাশিয়ার কাছে “একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”

পুতিন আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের বন্দর, জাহাজ ও ট্যাংকারের ওপর রুশ হামলা আরও জোরদার করা হবে।

রুশ প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের জবাবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, পুতিনের ভাষণ প্রমাণ করে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করতে চান না।

অন্যদিকে আয়ারল্যান্ড সফরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ শান্তি নিশ্চিত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য। তিনি স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের আগ্রহ কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে আর সেটিই রাশিয়ার মনোভাবকে আরও উৎসাহিত করছে।

ওয়াশিংটনে মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমাদের প্রতিনিধিরা রাশিয়ায় আছেন বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। এটি সহজ সমস্যা নয় ভয়াবহ পরিস্থিতি।” তিনি জানান, যুদ্ধ প্রতি মাসে বহু প্রাণহানি ঘটাচ্ছে।

এদিকে রাশিয়া দাবি করেছে যে তারা দনবাস অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্ক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে ইউক্রেন এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, রাশিয়া শুধুই মনোবল ভাঙার জন্য এমন প্রচার চালাচ্ছে।

পুতিন দাবি করেন, পোকরোভস্ক থেকে রুশ সেনারা “যে কোনো দিকেই” অগ্রসর হতে সক্ষম। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের আগের খসড়া শান্তি-প্রস্তাবে রাশিয়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সক্ষমতা সীমিত করার দাবি তোলে, পুরো দনবাসের নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের দখল বজায় রাখার শর্ত দেয় যা কিয়েভ স্পষ্টভাবেই “আত্মসমর্পণ” হিসেবে রক্ষা করেছে।

জেলেনস্কি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করাই চলমান আলোচনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এ তীব্র কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই বুধবার ব্রাসেলসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন