Tuesday, October 14, 2025

শেখ হাসিনা ও পরিবারের আট সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি


ফাইল ছবিঃ শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (সংগৃহীত)

রাজউক পরিচালিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা জমির প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ছয়টি পৃথক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের আট সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। আসামিদের অনুপস্থিতিতে আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার দুটি বিশেষ জজ আদালতে এই ছয়টি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। একদিকে বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। অন্যদিকে, বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম শেখ রেহানা, তার সন্তান টিউলিপ সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব ও আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও তিন মামলার শুনানি করেন।

দুদকের বিশেষ প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানিয়েছেন, প্রতিটি মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মামলাগুলোর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত যথাক্রমে ১১ আগস্ট ও ১৩ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর সড়কের কূটনৈতিক এলাকায় ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেন, যা তাদের আইনি যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এসব বরাদ্দের পেছনে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থান্বেষী উদ্দেশ্য ছিল।

শেখ হাসিনার নামে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট একটি ১০ কাঠার প্লট (নং ০০৯) বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই বছরের ২৪ অক্টোবর সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে (প্লট নং ০১৫) এবং ২ নভেম্বর সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে (প্লট নং ০১৭) প্লট বরাদ্দপত্র জারি করা হয়। পরে এগুলোর রেজিস্ট্রেশনও সম্পন্ন হয়।

এছাড়া শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার তিন সন্তান ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব ও আজমিনা সিদ্দিক—এর নামে একই এলাকায় আরও তিনটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এছাড়া মামলায় আরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞাসহ রাজউকের একাধিক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।

মোট ৬টি মামলায় আসামির সংখ্যা ৩৬ জন। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ৪০৯ ও ১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০২২ সালের বরাদ্দপ্রাপ্ত এসব প্লট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ওঠার পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে এসব অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পর চলতি বছরের শুরুতে তারা পৃথক ছয়টি মামলা করে। এরপর ২০ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাগুলো বিচারের জন্য পৃথক বিশেষ জজ আদালতে বদলির নির্দেশ দেন।

বর্তমানে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানা ও তার সন্তানেরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। নির্ধারিত তারিখে সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন