Tuesday, October 14, 2025

ডলারের বিকল্প হিসেবে স্বর্ণ মজুত বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো: বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন প্রবণতা


প্রতীকী ছবিঃ সোনা (সংগৃহীত । ইন্টারনেট)

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ডলারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বর্ণের মজুত বাড়াতে শুরু করেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (WGC) সর্বশেষ প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রবণতা আগামী দিনগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে ডলারকে 'অস্ত্র' হিসেবে ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর ফলে অনেক দেশ ডলারের বিকল্প খুঁজতে শুরু করে, যা স্বর্ণের চাহিদা ও দাম বাড়াতে সাহায্য করে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের 'সেন্ট্রাল ব্যাংক গোল্ড রিজার্ভ সার্ভে ২০২৫' বলছে, ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্বর্ণের ভান্ডার বাড়াতে আগ্রহী। একই জরিপে ৯৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, আগামী ১২ মাসের জন্য তাদের কোষাগারে পর্যাপ্ত সোনা মজুত আছে।

ইনভেস্টর ডট কমের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা স্বর্ণ ছিল সরকারি রিজার্ভের প্রায় ২০ শতাংশ বা প্রায় ৩৬ হাজার ২০০ টন, যা ২০২৩ সালের শেষে ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ধারণা করছে, এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আরও ৯০০ টন অতিরিক্ত সোনা কিনবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের ওপর আস্থা কমে যাওয়াই এই প্রবণতার প্রধান কারণ।

প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলো – ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা – শুধু ডলারের বিকল্প তৈরিতে আগ্রহী নয়, বরং তারা সবাই স্বর্ণের বড় ক্রেতা। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (পিপলস ব্যাংক অব চায়না) টানা সপ্তম মাসে তাদের স্বর্ণ মজুত বাড়িয়েছে। মে মাসে তাদের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩.২৮৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনার দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রমাগত সোনা কেনা প্রমাণ করে যে বেইজিং ডলারনির্ভরতা কমাতে কতটা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর আরেকটি উদাহরণ হলো মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে চীনের বিনিয়োগ কমা। ফেব্রুয়ারিতে চীনের হাতে ৭৮৪ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন ঋণপত্র ছিল, যা এপ্রিলের শেষে কমে ৭৫৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, দুই মাসে প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার কমেছে।

ডব্লিউজিসির সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে ৪৭ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বড় ও ছোট – উভয় ধরনের খনি থেকে সোনা সংগ্রহ করে। বড় খনি থেকে তাদের সোনা কেনার পরিমাণ ৩৭ শতাংশ এবং ছোট খনি থেকে ১৬ শতাংশ। বাকিটা তারা বাজার থেকে কেনে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম সর্বকালীন উচ্চতায় ওঠে, প্রতি আউন্স ৩ হাজার ৫০০ ডলারে পৌঁছেছিল। এই প্রতিবেদন লেখার সময় সোনার দাম ছিল ৩ হাজার ২৫০ ডলার। তবে আর্থিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা অব্যাহত থাকলে এর দাম আবারও বাড়তে পারে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন