Friday, December 5, 2025

চলতি মাসেই ভূ-কম্পন হতে পারে ২০ বার


ছবিঃ সংগৃহীত

আসিফ মাহমুদ, স্টাফ রিপোর্টার 


ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় দুই দিনের ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল থেকে শনিবার (২২ নভেম্বর) দিনের বিভিন্ন সময়ে এই চারটি কম্পন রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র। এর মধ্যে তিনটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী এবং একটি ঢাকায়।


শুক্রবার সকালে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি নরসিংদীর মাধবদী অঞ্চলে উৎপত্তি হয়। ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপন্ন হওয়ায় এর ঝাঁকুনি ছিল তুলনামূলক বেশি। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এই ভূকম্পনে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা। তীব্র এ কম্পনে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু এবং ৬০০-র বেশি মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এটিকে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।


বুয়েটের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, “দুই দিনে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। প্লেটের চলন সক্রিয় থাকায় আগামী এক সপ্তাহে আরও ২০টি কম্পন ঘটতে পারে।” তিনি সতর্ক করে জানান, ৫.৭ মাত্রার চেয়ে বড় কোনো ভূমিকম্প হলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বড় ধরনের দুর্যোগ দেখা দিতে পারে।


বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারত, ইউরেশিয়া ও বার্মা—এই তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় দেশটি ভূমিকম্পপ্রবণ বলে জানান ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের রুবাইয়াত কবির। তার মতে, “প্লেটগুলো এখন আটকানো অবস্থা থেকে খুলে যাচ্ছে। ভারতীয় প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের দিকে ঠেলে দিলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হয়।”


কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি গোপন ভূ-চ্যুতি বা ‘মেগাথার্স্ট ফল্ট’ শনাক্ত হয়েছে, যা বাংলাদেশে ৯ মাত্রার পর্যন্ত ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, “সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত প্লেট সংযোগস্থলে ৮০০ থেকে হাজার বছর ধরে জমে থাকা শক্তি এখনও মুক্ত হয়নি। পুরো অঞ্চলটিই ‘রিং অব ফায়ার’-এর মতো সুপার-ঝুঁকিপূর্ণ।”


ঘোড়াশালের ফাটল থেকে সংগ্রহ করা মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রতিক কম্পনের প্রকৃতি ও উৎপত্তি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ স ম ওবায়দুল্লাহ।


বিশেষজ্ঞরা ১৭৬২ সালের টেকনাফ-মিয়ানমার ফল্ট লাইনের ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের উদাহরণ টেনে বলেন, সে সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৩ মিটার উঁচু হয়ে গিয়েছিল। এ অঞ্চলে নতুন করে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা তৈরি করছে।


সতর্কবার্তায় বিশেষজ্ঞরা এ মুহূর্তে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ভবন কাঠামো শক্তিশালী করা, জরুরি প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা হালনাগাদ করা এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন তারা।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন