- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসনেই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রার্থী নিয়ে তীব্র মতবিরোধ তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি আসনে বিএনপির ঘোষিত বা সম্ভাব্য প্রার্থীকে ঘিরে বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আগেভাগেই প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠ দখলে রেখেছে।
এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, সিপিবি ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থীরাও বিভিন্ন আসনে সক্রিয় প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রম এখনও কার্যত স্থবির হয়ে আছে।
নাসিরনগর আসনে এবার প্রথমবারের মতো জয়ের আশা করছে বিএনপি। দলটি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হান্নানকে মনোনয়ন দিলেও অন্য প্রার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। জেলা বিএনপির সহসভাপতি কামরুজ্জামানদের দাবি—স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ব্যক্তি বাদ পড়েছেন।
অন্যদিকে জামায়াতের প্রার্থী এ কে এম আমিনুল ইসলাম নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
সরাইল–আশুগঞ্জ আসনে এখনো বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। আলোচনায় রয়েছে শরিক দলকে আসনটি দেওয়ার সম্ভাবনা। এদিকে সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা, শেখ শামীমসহ অন্তত সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে।
জামায়াত ইতোমধ্যে মোবারক হোসেনকে প্রার্থী করেছে। পাশাপাশি হেফাজতের আলেম জুনাইদ আল হাবিবের নামও জোট প্রার্থী হিসেবে ঘুরে ফিরে আসছে। শনিবার আশুগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ করে একদল সমর্থক নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে বিক্ষোভও করেছেন।
এই আসনেই বিএনপির অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ সবচেয়ে কম। কেন্দ্রীয় নেতা খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলকে ঘিরে সংগঠনের সবাইকে একতাবদ্ধ দেখা যাচ্ছে। তবে জামায়াতের জোনায়েদ হাসান তুমুল প্রচারে ব্যস্ত থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা উত্তপ্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কসবা–আখাউড়া আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে মুশফিকুর রহমানকে। কিন্তু দলের একাংশ দাবি করছে—তাদের দীর্ঘদিনের নেতা কবির আহমেদকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে তীব্র আপত্তি দেখা দিয়েছে। মুশফিকুর রহমান অবশ্য বলছেন, “প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি স্বাভাবিক, কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলানো হবে না।”
এই আসনে বিএনপি আবদুল মান্নানকে মনোনয়ন দিলেও তাঁর বিরুদ্ধে দলের ভেতরে প্রকাশ্য আন্দোলন চলছে। একাংশ কাজী নাজমুল হোসেনকে প্রার্থী করার দাবি জোরালো করছে। দুই পক্ষের মতবিরোধে এই আসনে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি শ্লথ হয়ে পড়েছে।
বাঞ্ছারামপুরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি। বিএনপি এই আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। জোটগত সমীকরণে আসনটি সাকিকে ছেড়ে দিতে পারে—এমন আলোচনা ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এম এ খালেকসহ অন্তত পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী বলছেন—যদি জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়া হয়, তা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই রাজনৈতিক উত্তাপ স্পষ্ট। বিএনপি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল, মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ এবং শরিকদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা দলটিকে চাপে ফেলেছে। বিপরীতে জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলো আগেভাগেই মাঠে নেমে সুবিধাজনক অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মনোনয়ন–সংকট সমাধান না হলে, ভোটের মাঠে বড় ধাক্কা খেতে পারে বিএনপি।