Tuesday, October 14, 2025

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. লামিয়া মওলার যুগান্তকারী আবিষ্কার


সংগৃহীত । ঢাকা ত্রিবুন)

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. লামিয়া মওলা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন, যা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে। তার গবেষণায় ‘ফায়ারফ্লাই স্পার্কেল’ নামে একটি নতুন গ্যালাক্সির সন্ধান পাওয়া গেছে, যা মহাবিশ্বের জন্মের (বিগ ব্যাং) মাত্র ৬০ কোটি বছর পর গঠিত হয়েছিল।

ম্যাসাচুসেটসের ওয়েলেসলি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি, স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (ক্যাসা)-এর সহযোগী সদস্য ড. মওলা ২১ জন বিজ্ঞানীর একটি দলের সঙ্গে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তারা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)-এর তথ্য ব্যবহার করে এই গ্যালাক্সিটি খুঁজে বের করেন, যা মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থায় গ্যালাক্সিগুলো কীভাবে গঠিত ও বিবর্তিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দিচ্ছে।

‘ফায়ারফ্লাই স্পার্কেল’ গ্যালাক্সিটি ১০টি কম্প্যাক্ট তারকা ক্লাস্টার নিয়ে গঠিত। এর সঙ্গে আরও দুটি ছোট গ্যালাক্সি রয়েছে, যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফায়ারফ্লাই-বেস্ট ফ্রেন্ড’ ও ‘ফায়ারফ্লাই-নিউ বেস্ট ফ্রেন্ড’। একসাথে, এই গ্যালাক্সিগুলো আদি মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির মতো প্রাচীন গ্যালাক্সির গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে।

এই আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে ‘গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং’ নামক একটি প্রাকৃতিক ঘটনার কারণে। যখন কোনো বিশাল গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের মধ্য দিয়ে দূরের গ্যালাক্সির আলো যায়, তখন তা বেঁকে যায় এবং আলো বহু গুণ বিবর্ধিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ‘ফায়ারফ্লাই স্পার্কেলের’ আলো ২৬ গুণ বিবর্ধিত হওয়ায় বিজ্ঞানীরা বিশাল দূরত্ব সত্ত্বেও এর জটিল কাঠামো নিয়ে গবেষণা করতে সক্ষম হয়েছেন।

ড. মওলা বলেন, “‘ফায়ারফ্লাই স্পার্কেল’ থেকে আলো আমাদের কাছে পৌঁছাতে ১৩.২ বিলিয়ন বছর সময় লেগেছে। তবে মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে গ্যালাক্সিটি এখন ১৩.২ আলোকবর্ষের চেয়ে অনেক বেশি দূরে অবস্থিত। আমরা যদি এটি এখন দেখতে পারতাম, তবে সম্ভবত আমাদের নিজস্ব মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির মতো দেখতে হতো। এই আবিষ্কার আমাদেরকে আমাদের গ্যালাক্সির শৈশবের একটি অবিশ্বাস্য ঝলক দিয়েছে।”

আইইউবির ফিজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ক্যাসা’র পরিচালক ড. খান মুহাম্মদ বিন আসাদ বলেন, “বাংলাদেশে পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার চর্চা সবেমাত্র শুরু হয়েছে এবং আমরা আশা করি আইইউবির ক্যাসা এই ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করবে। ড. মওলার এই যুগান্তকারী গবেষণার জন্য তাকে অভিনন্দন। তার সঙ্গে আমাদের এই সংযোগ, গবেষণা এবং জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া আইইউবিতে জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার ভিত্তি তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।”

আইইউবি হলো বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। পাশাপাশি, দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এখানে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার ওপর মাইনর কোর্সও করানো হয়। আইইউবিতে দুটি ডিপ-স্পেস ইমেজিং টেলিস্কোপও রয়েছে, যা ২০২২ সালে টরন্টো ইউনিভার্সিটির ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স থেকে ড. মওলার একটি আউটরিচ অনুদানের মাধ্যমে পাওয়া যায়।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন