- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | PNN:
চলমান অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত অর্থবছরের তুলনায় এটি কিছুটা উন্নতি, যা মূলত মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমার ফলে বেসরকারি ভোগ বৃদ্ধির কারণে হবে। তবে সংস্থাটি আশা করছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছাবে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে 'বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট' প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়। একইসঙ্গে 'এশিয়ার ডেভলপমেন্ট আপডেট' শীর্ষক আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের ডিভিশনাল ডিরেক্টর জেন পেসমি বক্তব্য রাখেন। এছাড়া 'এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আপডেট' প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন ঢাকা অফিসের চীফ ইকোনমিস্ট ফ্রানজিসকা লেসলোট ওহসেজ এবং 'বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট' প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ইকোনমিস্ট নাজসুস সাকিব খান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগের উন্নতি আশা করা হলেও, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকিং খাতের চলমান দুর্বলতা সেই প্রত্যাশা পূরণের গতিকে মন্থর করতে পারে। আমদানি স্বাভাবিক হওয়ায় এটি সামান্য ঘাটতিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উন্নতির কারণে রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মুদ্রাস্ফীতি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রাখলেও, ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে তা ৮ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়। অন্যদিকে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের নভেম্বরে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আগস্টে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা এবং খাদ্য সরবরাহ পুনরুদ্ধার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেছে।
তবে, প্রতিবেদনে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২০২৪ অর্থবছরে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ অর্থবছরে ২১ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যার প্রধান কারণ নারীর অংশগ্রহণ হ্রাস। এই সময়ে প্রায় ৩০ লাখ কর্মক্ষম বয়সী মানুষ শ্রমশক্তির বাইরে ছিলেন, যার মধ্যে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন নারী।
আর্থিক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ মূল চ্যালেঞ্জ। মূলধন-ঝুঁকি-ভারিত সম্পদ অনুপাত ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ন্যূনতম ১০ শতাংশের অনেক নিচে। এই দুর্বলতা কাটাতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মার্জ করা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাসনব্যবস্থা ও কর্পোরেট শাসনব্যবস্থার জন্য আইনি কাঠামো শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা।
প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে দুর্বল বিনিয়োগের কারণে ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সামান্য হ্রাস পেয়ে ৪ দশমিক ০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৪ অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যবসা পরিচালনার উচ্চ ব্যয় এবং এডিপি বাস্তবায়ন কমার কারণে এই মন্দা দেখা দিয়েছে।