- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্ট: PNN
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এখন খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা, যার ৩৫.৭৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
ব্যাংকারদের মতে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কম দেখানোর প্রবণতা ছিল। তথ্যে বিকৃতি ঘটিয়ে প্রকৃত চিত্র লুকানো হতো। বর্তমানে এই অপপ্রয়াস বন্ধ হওয়ায় প্রকৃত খেলাপি ঋণের সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে এই হার ৪০ শতাংশ ছুঁতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক মইনুল ইসলাম First বাংলাদেশকে জানান, “প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন। নইলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, জুন মাসে খেলাপি ঋণ ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে এটি বেড়ে ৩৬ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রভিশন ঘাটতি, অর্থাৎ ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি পূর্ণ না থাকার পরিমাণ, সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পিছনে বড় বড় গ্রুপের অসংলগ্ন ঋণ ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অনিয়ম অন্যতম কারণ। জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের একীভূত ঋণের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা খেলাপি।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, “বছরগুলো ধরে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশের পরিবর্তে গোপন রেখেছে। এখন সত্য তথ্য প্রকাশ হওয়ায়, ঋণ বৃদ্ধি হলেও প্রকৃত চিত্র সামনে এসেছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে খেলাপি ঋণের হিসাব নির্ধারণ করছে। এর ফলে ঋণ বকেয়া হওয়ার তিন মাস পরেই সেটি খেলাপি হিসেবে গণ্য হয়, যা আগে নয়। এতে খেলাপি ঋণের হার প্রকৃতপক্ষে বেড়েছে।
মূলত, দীর্ঘদিনের অনিয়ম, তথ্যের বিকৃতি ও বড় খেলাপিদের কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।