- ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক | চট্টগ্রাম :
৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। আগামীকাল বুধবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নির্বাচনী উচ্ছ্বাসে ভরপুর এখন পুরো ক্যাম্পাস। শেষ হয়েছে প্রচারণা, আর প্রার্থীরা ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৯০৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৪১৫ জন এবং হল ও একটি হোস্টেল সংসদে ৪৯২ জন প্রার্থী রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংসদে ৪৮ জন নারী ও ৩৬৬ জন পুরুষ প্রার্থী লড়ছেন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৭ জন, যার মধ্যে ১৬ হাজার ৮৪ জন ছাত্র এবং ১১ হাজার ৪৩৪ জন ছাত্রী।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ৬০টি ভোটকক্ষে গড়ে ৪০০–৫০০ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। প্রতিটি অনুষদ ভবনের ডিনকে রিটার্নিং অফিসার এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়ছেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। তিনি নিরাপদ, সন্ত্রাসমুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁর ইশতেহারে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি সুবিধা, ক্যান্টিনে ভর্তুকি বৃদ্ধি, হলে আসন সংরক্ষণ, ব্রেইল বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং “প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি সিট, একটি পড়ার টেবিল” নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল তাদের ইশতেহারে ৯টি ফোকাস পয়েন্ট ও ৩৩ দফা ঘোষণা করেছে। ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি জানিয়েছেন, “চাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। নির্বাচিত হলে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলব।” তিনি নিরাপদ ক্যাম্পাস, পরিবেশ দূষণ রোধ, সিসিটিভি স্থাপন, আলোবাতি সংস্কার ও আবর্জনামুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেছেন, “চাকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জায়গা। আমি নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের বিভাজন দূর করে ঐক্যবদ্ধ ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলব।” তিনি পরিবহন সংকট, আবাসন সমস্যা ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর দীর্ঘ তিন দশক ধরে শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিলেন। এবার ভোটের উৎসবকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে প্রাণচাঞ্চল্য, পোস্টার-ব্যানারে সেজে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের আশা, এ নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা নতুনভাবে শুরু হবে।