- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারাকে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৩৯ পৃষ্ঠার এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ও এর কয়েকটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর এই রায় ঘোষণা করেছিলেন।
ঘোষিত রায়ে আদালত শুধুমাত্র ২০ ও ২১ ধারাই নয়, বরং পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত হওয়া ৭ক, ৭খ, ৪৪(২) অনুচ্ছেদগুলোকেও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন।
উল্লেখ্য, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল। তবে, আজকের প্রকাশিত রায়ে বলা হয়েছে যে, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনটি পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। বরং, বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আগামী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আদালত।
রায়ে আদালত আরও বলেছেন, জাতীয় সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে এই বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।
গণভোটের বিধান পুনর্বহাল:
রায়ে আদালত বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছিল, যা সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ ছিল। এটি ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে যুক্ত হয়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তিসংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারাকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে, দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হলো।
২০০৪ সালের ৬ নভেম্বরে "পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী কাঠামো প্রবর্তন" এবং ২০০৪ সালের ১৯ আগস্টে "সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সাংঘর্ষিক নয়: হাইকোর্ট" শিরোনামে প্রকাশিত খবরগুলো এই রায়ের প্রেক্ষাপটে আরও প্রাসঙ্গিক।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয় এবং ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেছিলেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল জারি করেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে এই রায় দিলেন হাইকোর্ট।