Tuesday, October 14, 2025

সুদানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়: তৃতীয় বছরে গৃহযুদ্ধে নতুন রক্তপাত, ক্ষুধা ও রোগে মৃত্যুর মিছিল


ছবিঃ হৌদা আলি মোহাম্মদ, ৩২, চার সন্তানের বাস্তুচ্যুত সুদানি মা, উত্তর দারফুরের তাওইলায় একটি শিবিরে খাবার প্রস্তুত করছেন। এ সময় দেশটিতে আধাসামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস ও সুদানি সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছে (সংগৃহীত: মোহাম্মদ জামাল/রয়টার্স)

PNN আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

সুদানে সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আধাসামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধ বিশ্বে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট তৈরি করেছে। সংঘাত শুরুর পর তিন বছরের মাথায় ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ সরাসরি যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে, পাশাপাশি ক্ষুধা, অপুষ্টি ও রোগব্যাধিতে আরও অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটছে।

এই মাসে সামরিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। সেনাবাহিনী এখন রাজধানী খার্তুমসহ দেশের কেন্দ্র ও পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। তাদের যুদ্ধকালীন রাজধানী হচ্ছে লোহিত সাগর তীরবর্তী বন্দরনগরী পোর্ট সুদান।

অন্যদিকে আরএসএফ দারফুরের বিস্তীর্ণ এলাকা ও দক্ষিণের কোরদোফানের অনেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশার ঘিরে ফেলেছে, যেখানে সেনাদের শেষ ঘাঁটি অবশিষ্ট রয়েছে। এল-ফাশার পতন হলে আরএসএফ ফ্রান্সের সমান আকারের ভূমি নিয়ন্ত্রণে নেবে।

এল-ফাশার ও আশপাশের বাস্তুচ্যুত মানুষের শিবিরগুলোতে আরএসএফ-এর হামলা অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, শহরটিকে উত্তর, পশ্চিম ও পূর্ব দিক থেকে বালুর বাঁধ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। এতে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ, যাদের অর্ধেকই শিশু, অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইউনিসেফ এ পরিস্থিতিকে “শিশুদের দুর্ভোগের কেন্দ্রবিন্দু” বলে উল্লেখ করেছে।

অবরুদ্ধ জনগণ পশুখাদ্য আমবাজ খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছে। এ খাবার তৈরিতে বাদাম, তিল ও সূর্যমুখীর বীজের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটিও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের তথ্যে জানা গেছে, এল-ফাশারের নিকটবর্তী মেল্লিট শহরে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।

দারফুরে কলেরা মহামারিও দেখা দিয়েছে। শুধু ৩০ আগস্টই এই পানিবাহিত রোগে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। জুন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৮২ জন মারা গেছেন।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার খাদ্য সরবরাহ কাফেলা দীর্ঘদিন ধরে দারফুরে পৌঁছাতে পারছে না। সড়ক অবরোধ ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে মানবিক সহায়তা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে, দুই পক্ষই খাদ্যকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক খাদ্য কাফেলা ড্রোন হামলার শিকার হয়, যার জন্য সেনা ও আরএসএফ পরস্পরকে দোষারোপ করেছে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও উত্তেজনা নতুন রূপ নিয়েছে। আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেদতি’ দাগালো ৩১ আগস্ট দক্ষিণ দারফুরের রাজধানী নিয়ালায় তথাকথিত “শান্তি সরকার”-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। একই দিনে সেনাবাহিনী শহরটিতে ড্রোন হামলা চালায়।

এদিকে গত আগস্টে সুইজারল্যান্ডে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও এক মার্কিন উপদেষ্টার মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ তথ্য নিশ্চিত করেনি। বৈঠকের কিছুদিন পর আল-বুরহান সেনাবাহিনীর কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠান, যাদের অনেকেই সাবেক শাসক ওমর আল-বশিরের রাজনৈতিক ইসলামি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আল-বুরহান পুরোনো প্রভাবশালী মহলকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন।

দক্ষিণ কোরদোফানেও একই ধরনের ক্ষুধা-সংকট দেখা দিয়েছে, কারণ আরএসএফ দিল্লিং ও কাদুগলি শহর অবরোধ করে রেখেছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সুদানের এই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নয়, মানবিক বিপর্যয়কেও আরও গভীর করছে। অপুষ্টি, মহামারি ও অনাহারে দেশটি দ্রুত এক মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

তথ্যসূত্রঃ আল জাজিরা

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন