- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ সার্বিয়ায় প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচের ১২ বছরের শাসনের অবসান ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে তীব্র সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শনিবার (২৮ জুন) রাজধানী বেলগ্রেডে এই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়, যেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্বিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি অন্যতম বৃহৎ প্রতিবাদ, যেখানে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ অংশ নেয়। "আমরা নির্বাচন চাই"— এই স্লোগানে মুখর জনতা সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গঠিত এ আন্দোলন প্রেসিডেন্ট ভুচিচের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে অনেকেই আহত হন এবং বিপুলসংখ্যক মানুষকে আটক করা হয়।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভুচিচ ইনস্টাগ্রামে বলেন, বিক্ষোভটি “বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ”, যার লক্ষ্য সার্বিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করা। তার ভাষায়, "তারা চেয়েছিল সার্বিয়াকে অস্থির করে তুলতে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।" এর আগে বেলগ্রেডের হাই কোর্ট জানায়, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন, সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বর্তমানে ভুচিচের দ্বিতীয় মেয়াদ ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা এবং সেবছরই নির্বাচন নির্ধারিত রয়েছে। তবে সরকারবিরোধী দাবির মুখেও আগাম নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সদিচ্ছা দেখাননি তিনি। বর্তমানে তার দল ‘সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টি’ ও মিত্ররা সংসদের ২৫০ আসনের মধ্যে ১৫৬টি আসন নিয়ন্ত্রণ করে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিদ শহরের ৩৭ বছর বয়সী স্লাজানা লোজনোভিচ বলেন, “রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক দখলে চলে গেছে, দুর্নীতি ভয়াবহ। ভুচিচ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়বেন বলে মনে হয় না—নির্বাচনই একমাত্র পথ।”
বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, ভুচিচ প্রশাসন সংঘবদ্ধ অপরাধে যুক্ত, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করে। তবে সরকারপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ভুচিচের রাশিয়াপন্থী নীতিও সমালোচনার মুখে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর সার্বিয়া পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করে।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর নভি সাদ শহরের রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। দুর্নীতিকে দায়ী করে রাজপথে নামে ছাত্র, রাজনীতিক, শ্রমিক ও কৃষকরা। ওই ঘটনার জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিস পদত্যাগ করেন।
শনিবারের বিক্ষোভ শেষে আয়োজকরা এক বিবৃতিতে জানান, সরকার চাইলে সংঘর্ষ এড়াতে পারত, কিন্তু তারা জনগণের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছে। তারা আরও সতর্ক করে বলেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। একইসঙ্গে নাগরিকদের স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে জানান, আন্দোলন আরও এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।