- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
এ গ্রেপ্তারকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা সাবেক প্রধান বিচারপতির কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে তাঁকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,
“বিলম্বে হলেও বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের এক বড় শত্রু অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন।”
তিনি অভিযোগ করেন, খায়রুল হক তাঁর সংক্ষিপ্ত রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেশের রাজনীতিকে গভীর সংকটে ঠেলে দেন।
“তাঁর রাজনৈতিক অভিলাষ থেকেই তিনি বিচার বিভাগকে কলুষিত করেছেন। বিচার বিভাগের মতো একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠানকে তিনি জনগণের আস্থা থেকে বিচ্যুত করেছেন।”
দলটির দাবি, বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ সংবিধানিক পদে থেকে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন,
“অপেক্ষায় রইলাম... খায়রুল হক ফ্যাসিস্ট আমলে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি কখনোই দায়িত্বের মর্যাদা বুঝতে পারেননি বা আমানত রক্ষা করেননি।”
তিনি দাবি করেন, খায়রুল হক ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যার রায়ের মাধ্যমে “রাজনৈতিক মাফিয়াদের হাতে গুম, খুন ও লুণ্ঠনের লাইসেন্স” তুলে দেওয়া হয়।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,
“সাবেক প্রধান বিচারপতি যেন ন্যায়বিচারপ্রাপ্ত হন এবং ইতিহাসের শিক্ষণীয় শাস্তি ভোগ করেন।”
এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১১ সালের ১৭ মে অবসর নেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে একটি যুগান্তকারী ও রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত রায় দেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। পরবর্তী শুনানির তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
এ ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের মাঝেও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া ও রায়ের দিকে সবার দৃষ্টি এখন নিবদ্ধ।