- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
রাশিয়ার উপকূলবর্তী অঞ্চলে সংঘটিত এক শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামি ঢেউ আঘাত হেনেছে রাশিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৮.৮ এবং এটি রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাটস্কি শহর থেকে ১৩৬ কিলোমিটার পূর্বে, সাগরের তলদেশে সংঘটিত হয়।
রুশ প্রশাসন এই ভূমিকম্পকে "দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী" বলে আখ্যায়িত করেছে। রুশ গভর্নর ভ্লাদিমির সোলোদভ এক ভিডিও বার্তায় জানান, এই ভূমিকম্পের অভিঘাতে কামচাটকা উপদ্বীপ এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জের বেশ কয়েকটি শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
একটি হ্যান্ডআউট ছবিতে দেখা যায়, সেভেরো-কুরিলস্ক শহর সুনামিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। এটি রাশিয়ার কুরিল দ্বীপমালার পারামুশির দ্বীপে অবস্থিত। শহরটির নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায় এবং স্থানীয়দের তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামি ঢেউ ইতোমধ্যে ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার মার্কিসাস দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছেছে। ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ১.১ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত। দ্বীপের বাসিন্দাদের উচ্চভূমিতে চলে যেতে বলা হয়েছে এবং সেখানে এখনো নিরাপত্তা সতর্কতা বলবৎ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র (US Tsunami Warning Center) জানিয়েছে,
ইকুয়াডরে ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) পর্যন্ত।
চিলি, পেরু, কোস্টারিকা, হাওয়াই, জাপান এবং কিছু প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে সুনামি ঢেউয়ের সম্ভাব্য উচ্চতা ১-৩ মিটার।
ইকুয়াডর ইতোমধ্যেই গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ এবং উপকূলবর্তী নিচু এলাকা খালি করেছে।
চিলির দুর্যোগ সংস্থা SENAPRED উত্তরাঞ্চলীয় আরিকা ও পারিনাকোটা থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় মাগালানেস পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে সুনামি রেড এলার্ট ঘোষণা করেছে।
প্রথমে হাওয়াই, আলাস্কার আলেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করা হলেও পরে হাওয়াই ও আলাস্কায় সতর্কতা ডাউনগ্রেড করা হয়। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো উপকূলে ঢেউ পৌঁছেছে বুধবার সকাল ১:১২ মিনিটে (স্থানীয় সময়)। এখনো কিছু উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা বলবৎ রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, “STAY STRONG AND STAY SAFE!”
জাপান সরকার জানিয়েছে, ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে দেশটির কিছু উপকূলীয় অঞ্চলে।
হোক্কাইডো দ্বীপে ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার।
প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, জাপানের উপকূলীয় শহরগুলোতে মানুষজন উচ্চভূমির দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন।
দেশটির ফায়ার ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি এখনো কোনো হতাহত বা বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর দেয়নি। তবে হোক্কাইডো ও তোহোকু অঞ্চলজুড়ে সতর্কতা এখনো বলবৎ রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী অধ্যাপক নাথান ব্যাংস বলেন, “এই ভূমিকম্পটি এমন একটি সাবডাকশন জোনে ঘটেছে, যা বড় ধরনের সুনামি তৈরি করতে সক্ষম। এটি ২০০৪ সালের সুমাত্রা ও ২০১১ সালের তোহোকু ভূমিকম্পের মতোই একটি বিপজ্জনক উদাহরণ।” ভার্জিনিয়া টেকের সুনামি বিশেষজ্ঞ রবার্ট ওয়েইস বলেন, “৩ মিটার উঁচু ঢেউ যথেষ্ট ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক ঘটনা।”
ভূমিকম্পের পর কামচাটকা অঞ্চলের ক্ল্যুচেভস্কয় আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুত্পাত শুরু করেছে। প্রশাসনের ধারণা, ভূমিকম্পের চাপেই এই অগ্ন্যুত্পাত শুরু হয়েছে।
রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওলেগ মেলনিকভ জানিয়েছেন, কয়েকজন আহত হলেও এখন পর্যন্ত বড় কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
রাশিয়ার প্রাকৃতিক দুর্যোগটি শুধুমাত্র তাদের অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি এক বৈশ্বিক সতর্ক সংকেত। সুনামি কীভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তার প্রমাণ এখন পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল। কর্তৃপক্ষ এখনো সম্ভাব্য ঢেউ এবং পরবর্তী আফটারশক নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।