- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক জটিল কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছেন—একদিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র, অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও বজায় রেখেছেন গভীর সম্পর্ক। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান ওয়াশিংটনের কাছে ক্রমেই অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ভারতের ওপর “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শুল্ক বৃদ্ধি” করা হবে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের মাঝেও ভারত এখনও সস্তায় রুশ জ্বালানি তেল কিনছে। যদিও ভারতের এ নীতি একাধিক বছর ধরেই চলে আসছে, হঠাৎ করেই ট্রাম্পের এই কঠোর অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা তৈরি করেছে।
পূর্বেই ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর ন্যূনতম ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবার রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জ্বালানি ও সামরিক বাণিজ্যকে সামনে এনে তিনি বলছেন, “যখন পুরো বিশ্ব চায় রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুক, তখন ভারত ও চীন মিলে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছে – এটি মেনে নেওয়া যায় না।”
ভারত বলছে, তারা কোনো পক্ষ নেয়নি, বরং জাতীয় স্বার্থে জ্বালানি নীতিতে স্বাধীনতা বজায় রাখছে। মোদি প্রশাসনের ভাষায়, এ ধরনের শুল্ক আরোপ ‘অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক।’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেরাও এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে সার ও রাসায়নিক পদার্থ আমদানি করছে। সেক্ষেত্রে শুধু ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ একপাক্ষিক আচরণ।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত এখন আর সহজে মাথা নোয়াবে না। তবে দুই দেশের এই বাণিজ্য উত্তেজনা দীর্ঘমেয়াদে কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ভারত তার তেল আমদানি বহাল রেখেছে। এতে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার শক্তিশালী থাকলেও, আন্তর্জাতিকভাবে ভারতকে এক ধরনের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।
এই মুহূর্তে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্থায়িত্ব বড় প্রশ্নের মুখে। ট্রাম্পের পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখে ভারতকে এখনই একটি ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল নিতে হতে পারে—যা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বিপদে ফেলবে না।
এটা শুধু তেলের প্রশ্ন নয়, এটি ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও ভূরাজনৈতিক কৌশলের জন্য একটি বড় পরীক্ষা।