Tuesday, October 14, 2025

গাজা থেকে শতাধিক গুরুতর অসুস্থ শিশুকে যুক্তরাজ্যে নেওয়ার উদ্যোগ, দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান মানবিক সংগঠনগুলোর


ছবিঃ গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর একটি চোখ হারানো এক তরুণী জর্ডানে পৌঁছেছে। (সংগৃহীত । সালাহ মালকাবি )

গাজা উপত্যকায় চলমান সংকটে গুরুতর আহত ও অসুস্থ শতাধিক শিশুকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে আনার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। রোববার ঘোষণা দেওয়া এই মানবিক কর্মসূচির আওতায় অচিরেই শিশুদের এনএইচএস–এর (জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা) আওতায় চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

যদিও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার ও স্বাস্থ্য সহায়তামূলক সংগঠনগুলো, তারা সতর্ক করে বলেছে, সময়ক্ষেপণ করলে আরও শিশু মারা যেতে পারে। অনেক শিশুর চিকিৎসা বিলম্বিত হওয়ায় ইতোমধ্যেই তারা প্রাণ হারিয়েছে, অথবা বিকল্পভাবে অন্যান্য দেশে সরিয়ে নিতে হয়েছে।

প্রজেক্ট পিওর হোপ (PPH) নামের একটি দাতব্য সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও এনএইচএস-এর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নির্বাহী ওমর দিন বলেন, “আমরা অতীতেও তালিকাভুক্ত শিশুদের হারিয়েছি, কারণ অনুমোদন পেতে এত সময় লেগেছে যে তারা বেঁচে থাকতে পারেনি। সরকারকে এবার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

প্রাইভেট উদ্যোগে সংস্থাটি এ বছর তিনজন শিশুকে যুক্তরাজ্যে এনে চিকিৎসা দিয়েছে। এখন এই অভিজ্ঞতাই সরকার-চালিত নতুন কর্মসূচির রূপরেখা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

দিন বলেন, “এখনও সময় আছে কিছু করার। অনেক শিশুই এখনো বেঁচে আছে এবং তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু সত্যি বলতে, আমাদের অনেক আগেই এটি শুরু করা উচিত ছিল।”

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, অন্তত ১২,৫০০ রোগীকে গাজা থেকে সরিয়ে চিকিৎসা দেওয়া জরুরি। অথচ সহায়তা অবরোধ ও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সেই সুযোগ মিলছে না।

এদিকে, গাজা থেকে শিশুদের যুক্তরাজ্যে আনার দাবিতে একটি দাতব্য সংস্থা সম্প্রতি হোম অফিস ও ফরেন অফিসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়। গত বছর নভেম্বর থেকে তারা প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। তাদের দাবি অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে ৭১ জন শিশু মারা গেছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে।

চিলড্রেন নট নাম্বার্স (CNN) নামের আরেকটি সংস্থা জানিয়েছে, তাদের তালিকায় থাকা ৬০ জন শিশুর চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র প্রস্তুত রয়েছে, শুধু অনুমোদনের অপেক্ষায়।

সংস্থাগুলোর মতে, যুক্তরাজ্যে অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন, যারা সময় ও অর্থ দিয়ে এই শিশুদের সাহায্য করতে প্রস্তুত। “আমাদের কাছে এনএইচএস ছাড়াও একটি শক্তিশালী প্রাইভেট স্বাস্থ্য খাত আছে। সরকার যদি পাশে থাকে, তাহলে অনেক বেশি শিশুকে সহায়তা করা সম্ভব,” বলেন ওমর দিন।

তারা আরও জানান, ইতোমধ্যে ইতালি, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়েকজন শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি শিশুর শরীরের ৪০ শতাংশে চতুর্থ ডিগ্রি দগ্ধ ছিল, কিন্তু বিলম্বের কারণে তাকে যুক্তরাজ্যে আনা সম্ভব হয়নি, এবং শেষ পর্যন্ত তাকে জুন মাসে ইতালিতে পাঠানো হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটি আন্তঃবিভাগীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা আরও শিশুদের গাজা থেকে সরিয়ে এনে চিকিৎসা দেওয়ার পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছি। যেসব ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা দেওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত, সেসব ক্ষেত্রে আমরা সরাসরি সহায়তা করব।”

মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, এখন আর সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। অবকাঠামো, অভিজ্ঞতা ও সদিচ্ছা—সবই প্রস্তুত। এখন দরকার শুধু দ্রুত সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন