- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
দেশের ৪৩০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ১০টি জেলা হাসপাতালে স্থাপিত এনসিডি কর্নারে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা সংকটে পড়েছেন লাখো ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী। প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার রোগী এসব কর্নারে ওষুধ ও পরামর্শ পেয়ে থাকেন। তবে পাঁচ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা (ওপি) বন্ধ হওয়ায় গত মে মাস থেকে এ সেবা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২৬ মে সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, নতুন নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এনসিডি কর্নারে ওষুধ সরবরাহ স্থগিত থাকবে। এর ফলে কম আয়ের রোগীরা বিনা খরচে চিকিৎসা ও ওষুধ পাওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন।
উত্তরের প্রত্যন্ত গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৫-৩০ জন রোগী। তবে ওষুধ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজিয়া আফরিন। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুবাস সরকার জানান, তাঁর কেন্দ্রে গড়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী সেবা নেন, কিন্তু এখন ওষুধ না থাকায় অনেককে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।সরকারি হিসাব বলছে, এসব কর্নারে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। প্রতিমাসে যুক্ত হচ্ছেন প্রায় ১০ হাজার নতুন রোগী। এনসিডি কর্নারে সাধারণত ডায়াবেটিসের জন্য মেটফরমিন ও গ্লিক্লাজাইড, উচ্চ রক্তচাপের জন্য অ্যামলোডিপিন, লোজারটেন পটাশিয়াম, হাইড্রোক্লোরোথায়াজাইড, এবং হৃদরোগের জন্য অ্যাসপিরিন ও রোজুভাস্টেটিন দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে চালু হওয়া এনসিডি কর্নারের কার্যক্রম চলত সরকারের কৌশলগত পরিকল্পনা বা ওপি’র আওতায়। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওপি মেয়াদ শেষ হলেও নতুন পরিকল্পনা অনুমোদন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ওপি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ওষুধ ক্রয়ের বাজেট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওষুধ ক্রয় ও সরবরাহে সৃষ্টি হয়েছে সংকট।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন জানান, আগের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে নয়, এখন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনই ওষুধ কিনবে। নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদনের পর জুলাই থেকে সংকট কেটে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।সরকারি স্বাস্থ্য বুলেটিন অনুসারে, দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ হচ্ছে অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশই হৃদরোগজনিত মৃত্যু, যার মূল কারণ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব রোগীদের নিয়মিত ওষুধ না পেলে হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।
ছবিঃ ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত(১৭/০৬/২০২৫)