- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ২২তম দিনের সংলাপে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ মোট ৬২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ৩০টির বেশি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং বিভিন্ন প্রস্তাবে সম্মতি দেন।
৩০টি দল একমত হয়েছে যে, বাংলাদেশে একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা (জাতীয় সংসদ ও সিনেট) গঠিত হবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা হবে নিম্নকক্ষের সমতুল্য। পাশাপাশি জাতীয় সংসদে নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৯টি দল।
৩১টি দল একমত হয়েছে যে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬(২) পরিবর্তন করে নাগরিক পরিচয়ে "বাংলাদেশি" শব্দ ব্যবহৃত হবে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলেও দেশের সব মাতৃভাষাকে প্রচলিত ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হবে। সংবিধানে বাংলাদেশকে "বহুজাতি, বহুধর্মী, বহুভাষী ও বহু-সংস্কৃতির রাষ্ট্র" হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠন করা হবে। বিচারকদের আচরণবিধি প্রণয়ন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, এবং রাজনৈতিক আনুগত্যকে 'অসদাচরণ' হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশে সম্মত হয়েছে দলগুলো।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতাভুক্ত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও অর্থায়নে জবাবদিহি নিশ্চিতে নতুন আইন প্রণয়নের উপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
৩২টি দল একমত হয়েছে, ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন ও ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট সংশোধন করতে হবে। দুটি নতুন বিভাগ (কুমিল্লা ও ফরিদপুর) গঠনের প্রস্তাবও এসেছে।
দুদক কমিশনারের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচজনে উন্নীত করা হবে, এবং নিয়োগ পদ্ধতি ও মেয়াদেও পরিবর্তন আনা হবে। জজ বা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সরকারের পূর্বানুমতির বাধ্যবাধকতা বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ও অবিশ্বাসের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি দেশের রাজনীতি, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের দিকনির্দেশনা দিতে পারে।