- ২৫ অক্টোবর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক | নাটোর:
নাটোরের লালপুরে একটি অদ্ভুত ও চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে—একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফল হয়েছেন বাবা আব্দুল হান্নান ও তার মেয়ে হালিমা খাতুন। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, বাবা হান্নান তার মেয়ে হালিমাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছেন ফলাফলে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৪.৩৩ পেয়েছেন, আর তার মেয়ে হালিমা খাতুন পেয়েছেন জিপিএ-৩.৭১।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই এলাকায় তাদের এই সাফল্যের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তাদের প্রচেষ্টাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন এবং এটি এলাকায় এক নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আব্দুল হান্নানের জীবনযাত্রা ছিল খুবই সাধারণ। তিনি গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছোট ছেলে। ১৯৯৮ সালে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। এরপর তিনি সংসার জীবনে মনোযোগ দেন এবং দীর্ঘ ২৫ বছর পর, ২০২৩ সালে রুইগাড়ি হাই স্কুল থেকে পুনরায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন এবং পাশ করেন। এই সময় তিনি নিজের মেয়ের সঙ্গে পরীক্ষা দেন, তবে তার এই সিদ্ধান্ত ছিল একেবারে গোপন। পরবর্তীতে বিষয়টি প্রকাশ হলে স্থানীয়রা তার এই সাফল্যে অবাক হয় এবং প্রশংসা করেন।
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি অংশগ্রহণ করেন বাঘা কাকড়ামারি কলেজ থেকে এবং তার মেয়ে অংশগ্রহণ করেন গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে। ফলাফলে তারা দুজনেই সফল হন, তবে বাবার জিপিএ তার মেয়ের তুলনায় বেশি।
হালিমা খাতুন বলেন, "পরিবারে দারিদ্র্য থাকলেও বাবার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা দুজনই চাই একসঙ্গে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে।"
আব্দুল হান্নান বলেন, "ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কারণে আমি পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। কিন্তু যখন মেয়ে স্কুলে পড়তে শুরু করল, তখন আবার পড়াশোনার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মায়। বয়স কোনো বাধা নয়, ইচ্ছা থাকলে শেখা সম্ভব—এটা আমি প্রমাণ করেছি।"
লালপুর ইউএনও মেহেদী হাসান বলেন, "এটি সত্যিই একটি অনুপ্রেরণাদায়ক ঘটনা। একসঙ্গে বাবা-মেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন, এটি আমাদের সমাজে শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে এবং অন্যদেরও শিক্ষার পথে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ যোগাবে।"
এই সাফল্যের মাধ্যমে বাবা-মেয়ে দুজনই প্রমাণ করেছেন যে, শিক্ষা কোনো বয়সের সীমাবদ্ধতা মানে না এবং ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবকিছু সম্ভব।