- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
মাইডুগুরি, নাইজেরিয়া – কখনও কখনও মনে হয়, জাম্বা আলির কন্যা আঁতকে জন্ম নিয়েছিল অসুস্থ অবস্থায়।
৩০ বছর বয়সী মা জাম্বা আলি তার অসুস্থ দুই বছরের কন্যা আমিনাকে কোলে নিয়ে মাইডুগুরি শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের বাইরে বসেছিলেন। সেখানে তারা আরেকটি চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য গিয়েছিলেন, যা আশা জাগাচ্ছে যে শিশুটি সুস্থ হতে পারে।
দুই বছরের আমিনার চুল অংশে অংশে খসে গেছে এবং বাদামি রঙের যা প্রমাণ দেয় যে সে মারাত্মকভাবে পুষ্টিহীন। দীর্ঘ সময় ধরে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো হলেও উন্নতি কম। আলি জানান, “সে অসুস্থ হয়, একটু সুস্থ হয়, তারপর আবার অসুস্থ হয়ে যায়।”
জাম্বা আলি ও তার পরিবার বোকো হারাম সন্ত্রাসের কারণে বহুবার স্থানান্তরিত হয়েছে। তারা ড্যামবোয়া শহর থেকে বিতাড়িত হয়ে মাইডুগুরিতে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
পুষ্টিকর চিকিৎসা ও সহায়তা প্রদানের জন্য বেশ কয়েকটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম সীমিত করেছে বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। আলি বলেন, “তাদের সাহায্য সত্যিই কার্যকর ছিল। আমাদের প্রয়োজন এই সহায়তা ফিরে আসুক।”
উত্তরপূর্ব ও উত্তরপশ্চিম নাইজেরিয়ায় প্রায় পাঁচ মিলিয়ন শিশু মারাত্মক পুষ্টিহীনতার শিকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অঞ্চলের খাদ্য সংকট গত কয়েক বছরে সবচেয়ে মারাত্মক। দীর্ঘ সময় ধরে বোকো হারামের সন্ত্রাস ও অস্থিরতা খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত করেছে। উত্তরের অন্যান্য অঞ্চলেও দস্যুদের কার্যক্রমের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে।
এ বছরের আরেকটি বড় সমস্যা হল দাতব্য সংস্থাগুলোর অর্থায়নের ধ্বস। যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ডিং ৭৫ শতাংশ কমানোর ফলে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ইতিমধ্যেই উত্তরপূর্বের অর্ধেক পুষ্টি ক্লিনিক বন্ধ করেছে। প্রায় ৩ লাখ শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি সাপ্লিমেন্ট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ডব্লিউএফপির এমানুয়েল বিগেনিমানা জানান, “জুলাই মাসে আমরা শেষ শস্য বিতরণ করেছি। এখন শীতল মৌসুমে, ফসলের আগেই খাদ্যের কোনো ভাণ্ডার নেই।”
উত্তরপূর্ব নাইজেরিয়ার উর্বর জমি থাকলেও বোকো হারামের সন্ত্রাস, জলবায়ুর পরিবর্তন ও উর্বরতা হ্রাসের কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলশ্রুতিতে, শিশুদের পুষ্টি ও জীবনযাত্রা হুমকির মুখে।
জাম্বা আলির মতো অসংখ্য পরিবার প্রতিদিনের খাবার, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য সংগ্রাম করছেন। এই সংকট দ্রুত সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও স্থানীয় উদ্যোগের তাগিদ বেড়েই চলেছে।