- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
নয়াদিল্লি, ভারত – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আলাস্কায় বৈঠক কেবল দুই দেশের মধ্যেই নয়, ইউরোপ ও ইউক্রেনেও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হবে। কিন্তু এই বৈঠকের দিকে নজর রাখছে প্রায় ১০,০০০ কিমি দূরে ভারতও।
শীতল যুদ্ধের পর থেকে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত বর্ধমান কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করেছে। বিশেষ করে জর্জ ডব্লিউ. বুশ ও বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ এবং জো বাইডেনের সময়ও সম্পর্কের সেই ঘনিষ্ঠতা প্রায় অক্ষুণ্ণ ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই উষ্ণতা ভারতের প্রতি মূলত চীনের প্রতিকূল ভারসাম্য রক্ষার ওপর ভিত্তি করে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, ওয়াশিংটন ভারতের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কোয়াড নামক চারদেশীয় জোট (ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র)ও এর অংশ।
কিন্তু বারাক ওবামা ভারতকে “সেরা অংশীদার” হিসেবে বর্ণনা করার এক দশক পরে, সম্পর্ক এখন যেন জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চের মধ্যে একটি। এর অর্ধেক শুল্ক ভারতকে রাশিয়ার তেল ক্রয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে, যা ইউক্রেনের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতকে উৎসাহিত করেছে।
অন্যদিকে চীনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বড় শুল্ক আরোপ থেকে আপাতত ছাড় দিয়েছে, কারণ ওয়াশিংটন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় নিয়োজিত। এই ভিন্ন নীতির কারণে প্রশ্ন ওঠেছে, ট্রাম্পের চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব এবং ভারতসহ ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের প্রতি ভিন্ন আচরণ কি যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়াপ্রধান নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ট্রাম্পের সম্পর্কও এই জটিল কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটকে প্রভাবিত করেছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মোদির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ্যে চোখে পড়ে – একাধিক জনসমাবেশে তারা একসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, বারবার আলিঙ্গন ও বন্ধুত্ব প্রকাশ করেছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের জন্য এখন সময় এসেছে নতুন কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার, যাতে দেশটি একই সঙ্গে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এবং এশিয়ার জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল অবস্থান রাখতে সক্ষম হয়।