Friday, December 5, 2025

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড


ছবিঃ শেখ হাসিনা (সংগৃহীত)

PNN নিউজ ডেস্ক। ঢাকা 

জুলাই–অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছে। সোমবার দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই বহুল আলোচিত মামলার রায় প্রদান করেন।

ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আজ দুপুর পৌনে ১টার দিকে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পাঠ শুরু হয়। ছয় অধ্যায়ে বিভক্ত এই রায়ে গত বছরের জুলাই–অগাস্টের উত্তাল সময়ের বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, অমানবিক আচরণ এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নের অভিযোগ বিশদভাবে তুলে ধরা হয়।

ট্রাইব্যুনাল বলেছে, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্বিচারে ও নৃশংসভাবে মানুষ হত্যার মাধ্যমে যে জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি ছাড়া ন্যায়বিচার সম্ভব নয়।”

রায়ে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা দুটি অভিযোগ এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা একটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই দুজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন আদালত।

অন্যদিকে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন নিজ দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন কেবল মামলা স্বীকার করা মামুন।

শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে প্রধানগুলো হলো—

  • আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের নির্দেশ।

  • ছাত্র–জনতার বিরুদ্ধে ব্যাপক মাত্রায় হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনে উস্কানি ও প্ররোচনা।

  • রংপুর, চানখাঁরপুল ও আশুলিয়ায় সংঘটিত নির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা।

  • ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ ও ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’-এর আওতায় পরিকল্পিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ভূমিকা।

এই অভিযোগসমূহের পক্ষে প্রসিকিউশন অডিও টেপ, ভিডিও, বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ এবং ৮ হাজারের বেশি পৃষ্ঠার প্রামাণ্য নথি দাখিল করে।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই–অগাস্টে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মণের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে গত ৩ আগস্ট বিচার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

মোট ৮১ জন সাক্ষীর তালিকা থাকলেও ৫৪ জন সাক্ষ্য দেন। তিন মাস ১৩ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হয়।

রায়ের সময় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানানো হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রেখেছে।


Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন