- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মানিকদী পূর্বকান্দার ২১ বছর বয়সী দিপু মিয়া এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দালাল ও মাফিয়া চক্রের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে দিপুর পরিবার থেকে প্রাথমিকভাবে ৯ লাখ ৫ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১ বছর ১০ মাস পার হলেও দিপু ইতালি পৌঁছাতে পারেননি।
পরিবারের দাবি, এই সময়ের মধ্যে দালাল ও মাফিয়া চক্র একের পর এক টাকা হাতিয়ে নিলেও দিপুকে মুক্তি দেয়নি। কয়েকদিন পরপর মুখে কাপড় বেঁধে দিপুর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়, যা ভিডিও কলের মাধ্যমে পরিবারকে দেখানো হয়। টাকা দিলে নির্যাতন বন্ধ হয়।
দিপুর পরিবার জানায়, দিপুর মা তিন বছর আগে মারা যান। দিপু পরিবারের সাত ভাইবোনের মধ্যে ষষ্ঠ। দিপু বিদেশ যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে স্থানীয় দালাল ফজলুল হকের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৯ লাখ ৫ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন।
২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিপু লিবিয়া পৌঁছান। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক করা হয় এবং পরে মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যান। এরপর একের পর এক মুক্তিপণ দাবি করা হয়। চার মাস দালালের নিয়ন্ত্রণে থাকার পর, দ্বিতীয়বার সাগরপথে পৌঁছানোর কথা বলে নতুন করে ৯ লাখ টাকা দাবি করা হয়। দিপু কিছুদূর যাওয়ার পর আবারও আটক হন।
চলতি বছরের ১৫ জুলাই দালাল ফজলু ৮.৫ লাখ টাকা চায়, যা পরিবারের কাছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরের দিন ১৬ জুলাই দিপুকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং ২৪ জুলাই থেকে নতুনভাবে নির্যাতনের ভিডিও দেখানো শুরু হয়। চক্র দাবি করছে, ২৫ লাখ টাকা দিতে হবে দিপুকে মুক্তি দিতে। পরিবার আর এত টাকা দিতে সক্ষম নয়।
দিপুর ভগ্নিপতি নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এত টাকা খরচ করেও নির্যাতন থামছে না। দিপুর পরিবার আতঙ্কিত ও নিরাশার মধ্যে রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন বিষয়টি নজরে এনে বলেছেন, ভিডিও দেখে তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন যে, কীভাবে দিপুকে রক্ষা করা যায় এবং দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক এবং মানবপাচার প্রতিরোধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উস্কে দিয়েছে।