- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) খাতটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৫.৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এনবিএফআই খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে তারল্য সংকটে ভুগছে এবং ব্যাংকগুলোর সাথে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ভাবমূর্তি হওয়ায় আমানত সংগ্রহেও তাদের সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের এনবিএফআইগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খাতটিতে নতুন ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে, গত ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি বেড়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা।
একই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫.৩১ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালের মার্চে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন প্রশান্ত কুমার হালদার, যিনি পি কে হালদার নামে পরিচিত। রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এখনো এই কেলেঙ্কারির সম্পূর্ণ টাকা উদ্ধার হয়নি এবং এর প্রভাব দেশের পুরো আর্থিক ব্যবস্থার ওপর পড়েছে। এই খাতের সমস্যা দূর করতে হলে ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, আদায়ে আইনি কার্যক্রম ও নীতি জোরদার, পরিচালনায় জবাবদিহি নিশ্চিত এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান কালবেলাকে জানিয়েছেন, "সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল নয়। কিছু প্রতিষ্ঠান ভালো ব্যবসা করছে, তাদের ঋণ আদায়ও ভালো হচ্ছে। তবে এখনো ৩৫ শতাংশের বেশি ঋণ খেলাপি—এটি কোনোভাবে ইতিবাচক নয়। তাই এই খাতও পুনর্গঠন করতে হবে। ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট ও প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক শুধু ব্যাংকের জন্য নয়, এনবিএফআই খাতেও কার্যকর করতে হবে।"
এদিকে, খেলাপি ঋণে জর্জরিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলুপ্ত করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি কালবেলাকে বলেন, "আমরা এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাচাই-বাছাই করেছি। দেখেছি ১৫ থেকে ১৬টি প্রতিষ্ঠান একেবারে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে। এদের ৯৯ শতাংশ ঋণ খেলাপি। আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, তোমাদের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না। আশা করি, এ সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছ থেকে জবাব পাব।"