- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
আফগান রাজধানী কাবুল ও পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশে বৃহস্পতিবার সংঘটিত দুইটি বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। দুই দেশের সম্পর্ক যখন ক্রমশ অবনতি ঘটছে, ঠিক তখনই এই অভিযোগ নতুন করে সীমান্ত উত্তেজনা উস্কে দিয়েছে।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ প্রথমে জানান, কাবুলে একটি বিস্ফোরণ শোনা গেছে, তবে সেটিকে তিনি “তেমন গুরুতর নয়” বলে উল্লেখ করেন এবং তদন্ত চলছে বলে জানান। কিন্তু শুক্রবার আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে বিবৃতি দেয়, যদিও ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটল, যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাকি ভারতের ছয় দিনের সফরে রয়েছেন—তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর এটি তাদের প্রথম উচ্চপর্যায়ের সফর। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার এবং পাকিস্তানের প্রতি কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি—দুই উদ্দেশ্যেই এই সফর গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমদ শরীফ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আফগানিস্তান পাকিস্তানবিরোধী তৎপরতার ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের জনগণের সুরক্ষায় যা করণীয়, তা করা হবে।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান অভিযোগ করে আসছে যে আফগান তালেবান সরকার পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি)-কে আশ্রয় দিচ্ছে। এই গোষ্ঠীই পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেড়ে চলা হামলার জন্য দায়ী বলে দাবি ইসলামাবাদের।
২০২৪ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা, সামরিক হামলা ও পাল্টা প্রতিশোধের ঘটনায় বহু প্রাণহানি ঘটেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী গত ডিসেম্বর আফগান সীমান্তে বিমান হামলা চালায়, যার পর থেকে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক তামীম বাহিস বলেন, “যদি সত্যিই পাকিস্তান এই বিস্ফোরণের পেছনে থাকে, তবে তা শুধু রাজনৈতিক সম্পর্কই নয়, বরং ভবিষ্যতের সহযোগিতার সব পথ বন্ধ করে দেবে।”
অন্যদিকে, ইসলামাবাদভিত্তিক বিশ্লেষক ইহসানুল্লাহ মেহসুদ মনে করেন, “এই হামলা পাকিস্তানের জন্য একটি বার্তা—যদি আফগান তালেবান টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে না আনে, তবে পাকিস্তান সীমান্তের ওপারেও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে প্রস্তুত।”
তবে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এ ধরনের হামলা আফগানদের মধ্যে টিটিপির প্রতি সহানুভূতি বাড়াতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের এই নতুন মুখোমুখি অবস্থা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।