Tuesday, October 14, 2025

জুলাই হত্যা মামলায় জবানবন্দি: ভোট কারচুপি ও র‍্যাবের নির্দেশনার বিস্ফোরক তথ্য দিলেন সাবেক আইজিপি


ছবিঃ সংগৃহীত


আসিফ মাহমুদ, স্টাফ রিপোর্টার,‌ PNN News 24/7

জুলাই হত্যা মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তিনি এ সাক্ষ্য দেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ভোট ভরে রাখার পরামর্শ দেন তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী। পরে যেসব পুলিশ সদস্য এ কাজে অংশ নেয়, তাদের বিপিএম ও পিপিএম রাষ্ট্রীয় পদক প্রদান করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়। বিশেষ করে গোপালগঞ্জ বেল্টের কর্মকর্তারা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে থাকেন। এ কারণে সিনিয়র কর্মকর্তাদের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি ২০২৩ সালে অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও, অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং এড়াতে তার আইজিপি হিসেবে মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় সরকার।

সাবেক আইজি জানান, র‍্যাব কর্তৃক অপহরণ, আটক কিংবা হত্যার নির্দেশনা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসত। নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীর মাধ্যমে এসব নির্দেশনা দেওয়া হতো। র‍্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন ও মহিউদ্দিন ফারুকি এসব গোপন অভিযানে বিশেষভাবে পারদর্শী ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কোর কমিটির গোপন বৈঠক

জুলাই–আগস্টের আন্দোলন দমনে সরকারের কৌশল নিয়েও বিস্তৃত বক্তব্য দেন সাবেক আইজি। তিনি বলেন, ১৯ জুলাই থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রায় প্রতি রাত ৮–৯টার দিকে কোর কমিটির বৈঠক হতো। সেখানে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন।

সেসব বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত সচিব টিপু সুলতান ও রেজা মোস্তফা, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, র‍্যাব ডিজি ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, বিজিবি ডিজি মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার জিডি মেজর জেনারেল এ.কে.এম. আমিনুল হক, এনটিএমসির ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও ডিজিএফআই প্রধান উপস্থিত থাকতেন।

বৈঠকগুলোতে আন্দোলন দমন, বিরোধী সমন্বয়কদের আটকসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। এক বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন ডিজিএফআই ও ডিবি প্রধান হারুন। পরবর্তীতে তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে রাখা হয় এবং মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়।

তিনি দাবি করেন, ওই বৈঠকে তিনি সমন্বয়কদের আটকের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই তা কার্যকর করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধানের সম্পর্ক

জবানবন্দিতে সাবেক আইজি আরও উল্লেখ করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এজন্য মন্ত্রী তাকে ‘জ্বিন’ নামে ডাকতেন। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে হারুনকে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত কার্যকর মনে করতেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।


Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন