Tuesday, October 14, 2025

“জনগণের রাজকুমারী” প্রিন্সেস ডায়ানা: মানবিকতার চিরন্তন উত্তরাধিকার


ফাইল ছবিঃ প্রিন্সেস ডায়ানা (সংগৃহীত)

নুসরাত জাহানঃ PNN

তার মৃত্যু ঘটেছে এক চতুর্থাংশ শতাব্দীরও বেশি সময় আগে, তবু ওয়েলসের প্রিন্সেস ডায়ানার স্মৃতি আজও বিশ্বজুড়ে অমলিন। রাজকীয় জীবনের আড়ম্বর, নাটকীয়তা ও আলোচনার বাইরে তিনি যে উত্তরাধিকার রেখে গেছেন, তা রাজকীয় উপাধিতে নয়—বরং মানবিকতায়। এক প্রতীকী করমর্দন দিয়ে তিনি মানুষের মন জয় করতে পারতেন, আর সহমর্মিতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড দিয়ে নাড়িয়ে দিতে পারতেন গোটা জাতিকে।

​লাজুক কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক থেকে বৈশ্বিক আইকনে পরিণত হওয়ার ডায়ানার পথচলা ছিল দ্রুত ও তীব্র। জনমোহনের ঝড়ে তিনি আলোচনায় আসেন, তবে কঠিন সময়গুলোতে তিনি গড়ে তোলেন নিজের প্রকৃত পরিচয়। জনসাধারণের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও আবেগঘন সম্পর্ক স্থাপন করে, নিজের দুর্বলতা ও সংগ্রাম প্রকাশ করে, তিনি রাজপরিবারের এক অনন্য ও সহজাত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সেখান থেকেই জন্ম নেয় উপাধি—“জনগণের রাজকুমারী।”

তার মানবিক কর্মকাণ্ডে বিশ্ব সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন বিষয়গুলোকে সামনে আনেন, যেগুলো তখনো ছিল প্রান্তিক বা ভুল বোঝাবুঝির শিকার। ১৯৮৭ সালে লন্ডনের একটি হাসপাতাল সফরে গিয়ে তিনি প্রকাশ্যে এইচআইভি/এইডস রোগীর সঙ্গে নির্ভয়ে হাত মেলান। সেই সময় ভয় ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে থাকলেও তার এই সাহসী পদক্ষেপ বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়। এটি ছিল এক প্রতীকী দৃশ্য, যা কুসংস্কার ভেঙে রোগটিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানায়।

মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তিনি আরও বড় পদক্ষেপ নেন। সুরক্ষা বর্ম ও ভিসার পরে তিনি অ্যাঙ্গোলার সক্রিয় মাইনফিল্ডে হেঁটে যান এক মানবিক সংস্থার উদ্যোগে। এ পদক্ষেপ বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং স্থলমাইনের ভয়াবহ মানবিক ক্ষতির চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে। গবেষকরা মনে করেন, তার এই সাহসী পদক্ষেপের ফলেই দ্রুত গৃহীত হয় ‘অটোয়া চুক্তি,’ যা স্থলমাইন নিষিদ্ধ করার আন্তর্জাতিক সনদ।

ডায়ানার সবচেয়ে ব্যক্তিগত উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন তার দুই পুত্র, প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি। সাধারণ জীবনের অভিজ্ঞতা দিতে তিনি তাদের নিয়ে যেতেন গৃহহীন আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল ও নানা মানবিক প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে তারাও মায়ের পথ অনুসরণ করছেন—মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকে শুরু করে মাইন অপসারণ কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন।

১৯৯৭ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ডায়ানার মর্মান্তিক মৃত্যু বিশ্বজুড়ে গভীর শোকের ঢেউ তোলে। আজও তার স্মৃতি জীবন্ত, তার মানবিকতা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। রাজপরিবারের সীমার বাইরে গিয়েও তিনি বিশ্ববাসীর হৃদয়ে গড়ে তুলেছেন এক অনন্য স্থান—একজন সত্যিকারের “জনগণের রাজকুমারী” হিসেবে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন