- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
PNN আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গুবা, ইথিওপিয়া: ইথিওপিয়া তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প, গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ ড্যাম (GERD) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছে। এই বাঁধটি শুধু আফ্রিকার বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই নয়, এটি দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। তবে, বাঁধটির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ভাটির দেশ মিশর ও সুদানের সঙ্গে ইথিওপিয়ার দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
১০৮ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিশাল বাঁধটি ইথিওপিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর সর্বোচ্চ ৫,১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে, যা এটিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ বাঁধটিকে "জাতীয় গর্বের প্রতীক" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই বাঁধ নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো ইথিওপিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিদ্যুতের সুবিধা দেওয়া এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে অবদান রাখা, কোনো দেশের ক্ষতি করা নয়।
বাঁধটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ বলেন, "আমাদের সুদানি এবং মিশরীয় ভাইদের প্রতি; ইথিওপিয়া এই বাঁধটি তৈরি করেছে সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য, পুরো অঞ্চলকে বিদ্যুতায়িত করার জন্য এবং কালো মানুষের ইতিহাস পরিবর্তন করার জন্য। এটি আমাদের ভাইদের কোনো ক্ষতি করার জন্য নয়।" তিনি আরও বলেন, বাঁধের কারণে ভাটির দিকে নদীর পানি প্রবাহে কোনো বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেনি এবং এটি বন্যা ও খরা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে।
তবে, ইথিওপিয়ার এই অগ্রগতি ভাটির দেশগুলোর মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে মিশর, যার জনসংখ্যার প্রায় ৯০% মিঠা পানির জন্য নীল নদের উপর নির্ভরশীল, বাঁধটিকে নিজেদের "অস্তিত্বের জন্য হুমকি" হিসেবে দেখছে। মিশর বারবার দাবি করে আসছে যে, বাঁধটির জলাধার ভরাট ও পরিচালনার জন্য একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রয়োজন।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে জানায়, এই বাঁধের একতরফা উদ্বোধন আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কায়রো বরাবরই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে, কারণ তারা মনে করে এটি তাদের ঐতিহাসিক পানি অধিকারের পরিপন্থী। যদিও মিশর এখনো কোনো সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, তারা আন্তর্জাতিকভাবে ইথিওপিয়ার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে। একই সাথে, সুদানও মিশরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁধের বিষয়ে একটি চুক্তির দাবি জানাচ্ছে, যদিও একই সঙ্গে তারা বাঁধের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সস্তা বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে।
ইথিওপিয়ার অভ্যন্তরে, এই বাঁধ প্রকল্পটি দেশের জনগণের মধ্যে এক অভূতপূর্ব জাতীয় সংহতি ও গর্বের জন্ম দিয়েছে। দেশটির ৯১% অর্থায়ন এসেছে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে এবং বাকি ৯% অর্থ দেশের সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছায় অনুদান ও বন্ড কেনার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। ফ্লরিডা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইথিওপিয়ান পানি গবেষক মেকডেলাউইট মেসাই বলেন, "এটি ঐক্যের প্রতীক এবং দেখায় যে আমরা একত্রিত হলে কী অর্জন করতে পারি।"
বাঁধের কাছাকাছি বসবাসকারী অনেক গ্রামের মানুষ ইতিমধ্যে বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে। স্থানীয় কৃষক সুলতান আব্দুল্লাহি হাসান বলেন, "আমাদের গ্রামে এখন ফ্রিজ আছে। আমরা ঠান্ডা জল পান করতে পারি। আমরা এখন সবকিছুর জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করি।"
তবে, গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য এখনো উন্নত সঞ্চালন নেটওয়ার্কের প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটির শহরাঞ্চলে ৯৪% বিদ্যুতায়ন হলেও, সামগ্রিকভাবে মাত্র ৫৫% মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছেছে। তাই, বাঁধের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পেতে গ্রামীণ ইথিওপিয়ানদের আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হতে পারে।