- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধ পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে, আর সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক উত্তেজনাও তুঙ্গে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ইরানের সঙ্গে আলোচনার জন্য শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তাদের পাঠানোর কথা বিবেচনা করছেন।কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন থেকে দেশে ফেরার পথে, বিমান থেকেই দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির "বাস্তব ও স্থায়ী সমাধান" চান। তবে একইসঙ্গে তিনি বলেন, ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযানে পিছপা হবে না।প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ বা ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে তেহরানে পাঠানো হতে পারে আলোচনার লক্ষ্যে।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ইরানের “সম্পূর্ণ পরমাণু আত্মসমর্পণ” ছাড়া তিনি সন্তুষ্ট হবেন না।বিশ্বনেতারা ইতোমধ্যে এই সংঘাতের ব্যাপকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জি-৭ সম্মেলনে তারা ইরানকে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মূল উৎস হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দেশটিকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে তারা সমর্থন জানিয়েছে।ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর দাবি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ট্রাম্প তা নাকচ করে বলেন, তার ওয়াশিংটনে ফেরার পেছনে যুদ্ধবিরতির কোনো ভূমিকা নেই।ইসরায়েল এই সংঘাত শুরু করে একটি গোপন বিমান হামলার মাধ্যমে, যেখানে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হন।
দেশটি দাবি করেছে, বর্তমানে তারা ইরানের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আরও বড় আকারে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।ইরান পাল্টা জবাবে একাধিক শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছে বলে দাবি করেছে। দেশটির অভ্যন্তরে কাশান, লোরেস্তান ও তেহরানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় বহু প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। শুধু লোরেস্তানেই নিহত হয়েছেন অন্তত ২১ জন।
অন্যদিকে, ইসরায়েল জানায়, তাদের ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন এবং প্রায় ৩ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।বিশ্বজুড়ে এই সংঘাতের প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতেও। হরমুজ প্রণালীতে একটি জাহাজ দুর্ঘটনা এবং ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপের কারণে জাহাজ চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে জ্বালানির বাজারকে আরও অস্থির করে তুলছে।এদিকে, ইরান কূটনৈতিকভাবে ওমান, কাতার ও সৌদি আরবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিয়েছে—যদি ইসরায়েল হামলা বন্ধ করে, তবে তেহরান পরমাণু আলোচনায় নমনীয়তা দেখাতে পারে।চীন ইতোমধ্যে ইসরায়েল থেকে তাদের নাগরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে ইসরায়েলের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ১৫,০০০ সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস হয়েছে বলে সংস্থার ধারণা।পরিস্থিতি প্রতিদিন আরও জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কূটনৈতিক সমাধান না এলে যুদ্ধ যে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে—তা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ছবিঃ ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত (17/06/2025)