Tuesday, October 14, 2025

ইসলামী জ্ঞানে এআই নির্ভরতা ‘ফিতনা’ তৈরি করছে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিমত


প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত । ইন্টারনেট)

প্রযুক্তির সহজলভ্যতা সত্ত্বেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর মাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এটিকে ‘ফিতনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিশ্লেষণমূলক লেখায় তিনি এআই-এর নৈতিক দুর্বলতা, ভুলের প্রবণতা এবং এর অস্বচ্ছ কার্যপ্রণালী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

তাঁর মতে, এআই এখন শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, বরং এটি এমন একটি ফিতনা যা চুপিসারে বিশ্বাস ও ঈমানের মধ্যে অনুপ্রবেশ করছে। তিনি সতর্ক করেন যে, নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশ আলেম বা নির্ভরযোগ্য ইসলামী গ্রন্থের পরিবর্তে সরাসরি এআই-ভিত্তিক চ্যাটবট বা সার্চ ইঞ্জিনের ওপর ভরসা করছে, যা একপ্রকার গভীর দাওয়াতি ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।

তাঁর যুক্তির সমর্থনে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দেন। তিনি বলেন, এআই মডেলগুলো শুধু তথ্য বিশ্লেষণই করছে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে মিথ্যা বলছে, প্রতারণা করছে, এমনকি ব্যবহারকারীকে হুমকিও দিচ্ছে। ফ্রান্স২৪-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যানথ্রোপিক-এর ক্লড ৩.৫ মডেল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকির মুখে একজন প্রকৌশলীকে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করার হুমকি দিয়েছিল। এমন আচরণকে তিনি ‘নৈতিক বিপর্যয়ের লক্ষণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এছাড়াও, ধর্মীয় বিষয়ে এআই কর্তৃক ভুল তথ্য সরবরাহের ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন তিনি। ২০২৪ সালে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওপেন‌এআই-এর চ্যাটজিপিটি মাঝে মাঝে ধর্মীয় বিষয়ে ভুল তথ্য প্রদান করে। এর ফলে বিভ্রান্তিকর তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং আলেম সমাজকে সঠিক উৎস থেকে জ্ঞান গ্রহণের পরামর্শ দিতে হয়।

এআই-এর অন্যতম সমস্যা হিসেবে এর ‘ব্ল্যাক বক্স’ প্রকৃতিকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একটি এআই মডেল কীভাবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাল, সেই প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা যায় না। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে জ্ঞানের এই অস্বচ্ছতা বড় ধরনের বিপদ বলে তিনি মনে করেন। তিনি কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘জিজ্ঞাসা করো জ্ঞানীদের, যদি তোমরা না জানো।’ কিন্তু এআই কোনো আলেম নয়, বরং এটি একটি প্রোগ্রাম, যার পেছনে রয়েছে অগণিত তথ্যসূত্র, যার মধ্যে ভুল ও মিথ্যা মিশ্রিত থাকতে পারে।

বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞান অর্জনের জন্য ধৈর্য ও নিষ্ঠার অভাব দেখা যাচ্ছে। তারা আলেমদের দরজায় না গিয়ে যান্ত্রিক প্রোগ্রামের কাছ থেকে দ্বীনের জ্ঞান নিতে চায়। এর ফলে ‘ইলম’-এর বদলে কেবল ‘তথ্য’ নেওয়া হয়, যার মধ্যে নেই কোনো তাকওয়া বা আমানত। তিনি মনে করেন, এই মানসিকতা কেবল প্রযুক্তির সংকট নয়, বরং আত্মার, বিশ্বাসের এবং আমানতেরও সংকট।

এই ফিতনা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু সমাধানের কথা বলেন। তিনি বলেন, ইসলাম কোনো প্রযুক্তির বিরোধী নয়, বরং যে প্রযুক্তি ঈমান ও জ্ঞানের খেদমতে আসে, তাকে স্বাগত জানায়। তাই এআই ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই আলেমদের তত্ত্বাবধানে এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে হতে হবে।

তিনি সৌদি আরবের কিং সৌদ ইউনিভার্সিটির উদাহরণ দেন, যেখানে শুধু সহিহ কোরআন ও হাদিসের তথ্য ব্যবহার করে একটি ইসলামিক এআই প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। লেখকের মতে, বাংলাদেশেও মাদরাসা শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একত্রে কাজ করে প্রযুক্তির ইসলামি বিকল্প তৈরি করা প্রয়োজন।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন