- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
PNN নিউজ ডেস্ক। ফরিদপুর
ফরিদপুরের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসা ক্ষমতাসীন দলের অনুপস্থিতি জেলার চারটি আসনেই নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় নির্বাচনকে ঘিরে মাঠ দখলে নেমেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং কয়েকটি ছোট ইসলামি দল। এরই মধ্যে বেশির ভাগ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে নিয়মিত গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করছেন তারা।
জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে স্থানীয় কোন্দলের কারণে একটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। এক আসনে আবার ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বদলি প্রার্থীর দাবিতে আন্দোলন চলছে। অন্যদিকে জামায়াত চারটি আসনেই আগাম মনোনয়ন দিয়ে সংগঠনের সব স্তরে ভোটের প্রস্তুতি জোরদার করেছে। পাশাপাশি খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির কয়েকজন নেতাও পৃথকভাবে প্রচারণা পরিচালনা করছেন।
এই আসনে বিএনপি কখনো ধারাবাহিক সাফল্য পায়নি। তবে এবার দলীয় কোন্দলই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, শামসুদ্দীন মিয়া ও মনিরুজ্জামান মৃধার মধ্যে তীব্র বিরোধের কারণে এখনো কেউ মনোনয়ন পাননি। সাম্প্রতিক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।
এদিকে জামায়াত ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মো. ইলিয়াস মোল্লাকে মাঠে নামিয়েছে। তিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জনসভা করে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করছেন তিনি। পাশাপাশি খেলাফত মজলিসের মুফতি শারাফাত হোসাইন, ইসলামী আন্দোলনের ওয়ালিউর রহমান ও এনসিপির হাসিবুর রহমানও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এ আসনটি ঐতিহ্যগতভাবে প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও বিএনপির কে এম ওবায়দুর রহমানের পরিবারকেন্দ্রিক। এবার ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর অঞ্চলে বেশ সাড়া ফেলেছেন। তিনি এলাকার উন্নয়ন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিদিন গণসংযোগ করছেন।
জামায়াতের সোহরাব হোসেন আগেভাগে প্রচারণায় থাকায় এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠেছে। খেলাফত মজলিসের শাহ আকরাম আলীও দৌড়ে আছেন।
বিএনপির দুর্গখ্যাত এই আসনে প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে নায়াব ইউসুফকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও এলাকায় তৃণমূলের একাংশ এতে অসন্তুষ্ট। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী প্রকাশ্যে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা বেড়েছে।
এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি এ কে আজাদের প্রচারণা ইতোমধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি দাবি করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হয়ে কর্মসংস্থান, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন ও চাঁদাবাজি নির্মূলের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবেন।
জামায়াত, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি ও এনসিপির আরও কয়েকজন প্রার্থী সক্রিয়ভাবে প্রচারে রয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির জন্য কঠিন এই আসনে এবার কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন। তিন উপজেলায় দলীয় বিভাজন কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
জামায়াতের প্রার্থী সরোয়ার হোসেনও নিয়মিত সভা করে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন ও সিপিবিও মাঠে সরব রয়েছে।
আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে ফরিদপুরের চারটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত বিএনপি–জামায়াত ও ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ছোট দলগুলোও সুযোগ বুঝে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ন্ত্রণ ও মাঠ পর্যায়ে সংগঠনের শক্তি প্রদর্শনই এবার প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।