Tuesday, October 14, 2025

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে অস্ট্রেলিয়া, জানালেন প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ


অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ১১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন। (সংগৃহীত: এএফপি)

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ঘোষণা করেছেন যে তার সরকার আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (UNGA) অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। সোমবার ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার চক্র ভাঙার এবং গাজায় সংঘাত, দুর্ভোগ ও অনাহার শেষ করার মানবতার সর্বোত্তম আশা।”

অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে যখন কানাডা, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যও আগামী মাসে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের বেশিরভাগ সদস্য রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ইসরায়েলের তীব্র প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ার এই ঘোষণায় তীব্র সমালোচনা করেছে ইসরায়েল। অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আমির মাইমন বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে একতরফাভাবে স্বীকৃতি দেওয়া গাজার যুদ্ধ শেষ করতে কোনো ভূমিকা রাখবে না। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগও এ পদক্ষেপকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার “পুরস্কার” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

দেশে বিক্ষোভের প্রেক্ষাপট
এই ঘোষণা এসেছে প্রায় এক সপ্তাহ পর, যখন লাখো অস্ট্রেলিয়ান সিডনি হারবার ব্রিজ অতিক্রম করে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভের পরদিন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং সতর্ক করে বলেন, “ফিলিস্তিন স্বীকৃতির আগেই হয়তো স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কোনো ফিলিস্তিনই অবশিষ্ট থাকবে না।” তিনি আরও জানান, এটি “কখন হবে” সেই প্রশ্ন, “হবে কি না” নয়।

অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান বিরোধী দল লিবারেল পার্টি এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে দ্বিদলীয় ঐক্যের বিরোধিতা করছে। লিবারেল পার্টির নেতা সুসান লে বলেন, “হামাস এখনও গাজার নিয়ন্ত্রণে এবং জিম্মিরা মুক্তি পায়নি—এ অবস্থায় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হামাসের কৌশলগত উদ্দেশ্যকে সফল করবে।”

অন্যদিকে, দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম রাজনৈতিক দল গ্রিনস ফিলিস্তিন স্বীকৃতির ঘোষণা স্বাগত জানালেও বলেছে, এটি জনতার “বাস্তব পদক্ষেপ” দাবিকে পূরণ করেনি। গ্রিনস সিনেটর ডেভিড শুব্রিজ জানান, “অস্ট্রেলিয়ার লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র ব্যবসা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু আলবানিজ সরকার এখনও সেই দাবি মানেনি।”

ফিলিস্তিনি পক্ষের প্রতিক্রিয়া ও শর্তাবলি
অস্ট্রেলিয়ান প্যালেস্টাইন অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (APAN) এই ঘোষণাকে “রাজনৈতিক প্রলেপ” বলে সমালোচনা করেছে এবং অস্ট্রেলিয়াকে ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধে সহযোগী থাকার অভিযোগ এনেছে। তাদের মতে, “ফিলিস্তিনি অধিকার কোনো পশ্চিমা রাষ্ট্রের দান নয়, এটি তাদের জন্মগত অধিকার।”

প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ জানান, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (PA) দেওয়া কিছু প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে। এর মধ্যে রয়েছে—ইসরায়েলের শান্তিপূর্ণ অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার, নিরস্ত্রীকরণ, এবং সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে পশ্চিম তীরের কিছু অংশ পরিচালনা করছে। তবে ২০০৬ সালের পর থেকে সেখানে কোনো সংসদীয় নির্বাচন হয়নি। ২০০৭ সালে সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের পর থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে হামাসের হাতে।

আলবানিজ বলেন, “এই প্রতিশ্রুতিগুলো হামাসকে বিচ্ছিন্ন, নিরস্ত্র ও অঞ্চল থেকে উৎখাত করে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য প্রকৃত আত্মনিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি করবে।”

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন