Tuesday, October 14, 2025

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিপোর্টঃ জলবায়ু ঋণের ফাঁদে দারিদ্র্য ও টেকসই উন্নয়ন হুমকির মুখে বাংলাদেশ


ছবিঃ সংগৃহীত

PNN ডেস্ক:
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ ও ঋণ-নির্ভর দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ প্রকাশিত ক্লাইমেট ডেট রিস্ক ইনডেক্স (সিডিআরআই-২০২৫) অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্কোর ৬৫.৩৭ (১০০ এর মধ্যে), যা ২০৩১ সালে বেড়ে ৬৫.৬৩-এ পৌঁছাবে। এ অবস্থায় দেশটিকে রাখা হয়েছে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ শ্রেণিতে।

কম নিঃসরণ, তবু ঋণের বোঝা

বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে ০.৫ শতাংশেরও কম অবদান রাখে। তবুও মাথাপিছু জলবায়ু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৬ মার্কিন ডলার, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ।

  • ডেট-টু-গ্রান্ট অনুপাত: ২.৭ (এলডিসি গড় ০.৭ এর প্রায় চারগুণ)

  • মাল্টিল্যাটারাল ঋণ অনুপাত: ০.৯৪ (এলডিসি গড় ০.১৯ এর প্রায় পাঁচগুণ)

এটি দেখায়, বাংলাদেশ জলবায়ু অর্থায়নে অনুদানের চেয়ে ঋণের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এর ফলে দেশটি ঋণের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।

অভিযোজন ঘাটতি ও টেকসই উন্নয়ন ঝুঁকি

সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশের অ্যাডাপ্টেশন-টু-মিটিগেশন অনুপাত মাত্র ০.৪২, যা এলডিসি গড়ের অর্ধেকেরও কম। অর্থাৎ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অভিযোজন খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে না।

এই ঘাটতির কারণে—

  • উপকূলীয় এলাকায় ভূমি হারানো, লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি বেড়ে যাচ্ছে।

  • কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

  • জীবিকা হারিয়ে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের শহরমুখী অভিবাসন বাড়ছে।

  • দারিদ্র্যের হার পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপট

গবেষকরা বলেছেন, উন্নত বিশ্ব জলবায়ু তহবিলে অনুদানের পরিবর্তে ঋণকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশসহ জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো টেকসই সমাধানের বদলে ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে।

গবেষণার নেতৃত্বে থাকা এম. জাকির হোসেন খান জাতীয় পর্যায়ের উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে বলেন, “জলবায়ু ঋণ কাঠামো বৈষম্যমূলক। উন্নত দেশগুলো দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের জরুরি ভিত্তিতে বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়ন ব্যবস্থার সংস্কার চাই।”

সহগবেষক তন্ময় সাহা যোগ করেন, অভিযোজন প্রকল্পে যথাযথ বিনিয়োগ ছাড়া বাংলাদেশের মতো দেশের অস্তিত্বই ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—

  1. ঋণনির্ভর অর্থায়নের বদলে অনুদান বাড়াতে হবে।

  2. অভিযোজন খাতে বাজেট ও বৈশ্বিক তহবিল থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধি জরুরি।

  3. টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসনে জলবায়ু অর্থায়নকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে রূপান্তর করতে হবে।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় অন্যতম ‘ভুক্তভোগী কণ্ঠস্বর’ হিসেবে পরিচিত। তবে কার্যকর অর্থনৈতিক সহায়তা না এলে, দেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রা আগামী দশকে আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন